আবারও রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়াচ্ছে মিয়ানমারের বৌদ্ধবাহিনী

    0
    354

    পালাতে গিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ৭ হাজার রোহিঙ্গা অবরুদ্ধ

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮অক্টোবর,ডেস্ক নিউজঃ  রাখাইন রাজ্যে আবারও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়াচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় নতুন করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। সংস্থাটির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ অবসস্থায় রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং তাদের নিজ ভূখ-খণ্ডে ফেরত পাঠানোর পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম জোরদার করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম।

    ইউএনএইচসিআরের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আবারও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার রাত থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গাই জানিয়েছেন, রাখাইনে হত্যার হুমকি নিয়েও তারা অবস্থান করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আর থাকা হলো না। তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পর তারা গ্রাম ছেড়েছেন। একই তথ্য দিয়েছেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আন্দ্রেজ মেহেসিসও। তিনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, রোববার রাত থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, তারা হত্যার হুমকি সত্ত্বেও রাখাইনে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ায় তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে।

    জাতিসংঘের বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল নিউজ এশিয়া মঙ্গলবার জানায়, এক সপ্তাহে রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪৫ হাজার। ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে দমনপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ইউরোপে আমন্ত্রণ জানানো হবে না বলে জানায়। রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

    সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান : বিডিনিউজ জানায়, রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্যাতিত এ জনগোষ্ঠীকে নিজ ভূমিতে ফেরানোর পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম জোরদার করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম। সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ইউএনএইচসিআর, মানবতাবিষয়ক কাজে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী কার্যালয় ওসিএইচএ এবং আইওএম এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।

    রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ২৩ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এ তিন সংস্থার আয়োজনে হতে যাচ্ছে ‘প্লেজিং কনফারেন্স’, যার উদ্যোগে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েত সরকার। মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলনের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয় ওই যুক্ত বিবৃতি থেকে। এতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের অসহায় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে, দলে দলে দেশান্তরী হওয়া বন্ধে এবং চূড়ান্তভাবে নিরাপদে ও মর্যাদা নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের আশ্রয় দেয়া সম্প্রদায়গুলোর সমর্থনে প্রচেষ্টা জোরদার করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।’ ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, ওসিএইচএর প্রধান মার্ক লওকক এবং আইওএমের প্রধান উইলিয়াম ল্যাসি সুইং বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমার থেকে; এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারেই।

    শাহপরীর দ্বীপে একজনের লাশ উদ্ধার : চট্টগ্রাম ব্যুরো ও কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে এক রোহিঙ্গা কিশোরীর লাশ ভেসে এসেছে। টেকনাফ উপজেলায় সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া ভরাখালে মুখভাঙা এলাকায় সোমবার ভোর রাতে ওই নৌকাডুবি ঘটে।

    পুলিশ জানায়, রোববার রাত ১২টার দিকে মিয়ানমারের মংডুর দংখালী গ্রাম থেকে নৌকাটি ছেড়ে আসে। নৌকায় ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো রোহিঙ্গা ছিল। এদের মধ্যে ছিল ৩০টি শিশু।

    সেনাবাহিনীর হাতে ৭ হাজার রোহিঙ্গা অবরুদ্ধ : বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা শুরু করেছে। প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে জড়ো হয়েছে।আলোকিত বাংলাদেশ