আন্ধারকোটায় ব্রিজের অভাবে থমকে আছে উন্নয়নের চাকা

    0
    222

    নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উপজেলার শেষ প্রান্তে আন্ধারকোটা নামক স্থানে ছোট যমুনা নদী পারাপারের নৌকায় এক মাত্র ভরসা । এই নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন ১০ গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ।
    স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হলেও ১১ গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষের ছোট যমুনা নদী পারাপারের জন্য আজও কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

    ভৌগলিক কারনে আত্রাই উপজেলার বিলবেষ্টিত কালিকাপুর ইউনিয়নের অবহেলিত জনপদের মধ্যে আটগ্রাম, হরপুর, তারানগর, বাউল¬াপাড়া, ঝিয়ারীগ্রাম, শলিয়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী রাণীনগর উপজেলার কৃষ্ণপুর, মালি , ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ি ও বেতগাড়ী গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের বসবাস হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক জরুরী সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বি ত রয়েছে গ্রামগুলোর মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে এসে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর ওপর দিয়ে পারাপারের জন্য আত্রাই উপজেলার আন্ধারকোটা ও রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রাম নামক স্থানে নদীর ওপর আজও কোন ব্রিজ নির্মান হয়নি।

    একটি ব্রিজের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো নৌকা আবার কখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় প্রায় ১১টি গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ৭ হাজার মানুষ। বর্ষাকালে নৌকায় নদী পারাপার হলেও শুকনো মৌসুমে নব্যতা সঙ্কটের কারণে এলাকাবাসীর উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।

    বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে বন্যার পানি চার দিকে থই থই করে। তখন পারিবারিক প্রয়োজনে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ভাড়ায়চালিত নৌকা। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বিলের পানি কমতে থাকায় পানি-কাদায় একাকার হলেও হেঁটেই উপজেলার আটগ্রাম, হরপুর, তারানগর, বাইলাপাড়া, ঝিয়াড়িগ্রাম, শলিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তাদের প্রয়োজনের তাগিদে জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করে।

    ছোট যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় ঘোষগ্রাম-আন্ধারকোটা নামক স্থানে নদী পারাপারের জন্য একটি নৌকার উপরই ভরসা করতে হয়। আত্রাই উপজেলার ওই গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি ইরি ধান উৎপাদন হলেও যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোনো পথ না থাকায় স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ কৃষি পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্যমূল্য থেকে বি ত হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফড়িয়া ও মহাজনদের কাছে চলমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও কারো যেন মাথা ব্যথা নেই। আত্রাই কালিকাপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় মাঝে মধ্যে শুষ্ক মওসুমে যমুনা নদীর পশ্চিম তীর দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও বন্যা আর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছরই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    এ ব্যাপারে আন্ধারকোটা গ্রামের আজমেল প্রামানিক জানান, আমরা যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে নদী হয়ে আসছি। বছরের পর বছর ধরে কৃষি পণ্যের নায্য মূল্য থেকে বি ত হচ্ছি।

    এ বিষয়ে আটগ্রাম তারানগর গ্রামের কলেজ পড়–য়া ছাত্রী নিশাত আনজুমান বলেন, আমাদের এ গ্রামে হাসপাতাল ক্লিনিক এমনকি ভালো মানের কোন ডাক্তারও নেই। গ্রামে মধ্য রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ দাবি কেউ বাস্তবায়িত করেনি। যার জন্য এলাকাবাসীকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই জরুরি ভিত্তিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।

    আত্রাই উপজেলার ৭ নম্বর কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হক নাদিম জানান, ছোট যমুনা নদীর ওপরে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি হলেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় জনগণ অনেক কষ্টে আছে। জনসাধারণের স্বার্থে সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ও সংশিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি।

    এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, উপজেলার কালিকাপুর ইাউনিয়নের আন্ধারকোটা নামক স্থানে নদী পারাপারের জন্য একটি ব্রিজ জনগুরুত্বপূর্ণ। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন পাঠানো হয়েছে। আশাকরছি দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।