আজ সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

0
295

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শনিবার ১৯ নভেম্বর সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে উপলক্ষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের সমাগম বাড়ছে সিলেট নগরীতে।
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে এসেছ অনেকেই।শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা নগরীতে প্রবেশ করেই দলবেধে মিছিল নিয়ে যাচ্ছেন সমাবেশ স্থলে। সেখানে বেড়েই চলেছে নেতাকর্মীর উপস্থিতি। আলিয়া মাদরাসা মাঠে সমাবেশ শুরুর ১৮ ঘণ্টা আগেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

শুক্রবার বিকেল থেকেই এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার নেতৃবৃন্দের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশের দিকে যেতে দেখা গেছে।পরিবহন ধর্মঘট থাকায় মোটরসাইকেল ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে দূর-দূরান্তের দলীয় কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে আসা আশপাশের আত্মীয়-স্বজন দের বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্পটে পৌঁছে গেছেন।
এছাড়াও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ শহর সিলেটের কয়েকটি উপজেলা থেকে ট্রেনে আসেন কর্মীরা।পরে একসময় মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়াও দেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলে সবার পরনে সমাবেশ উপলক্ষে তৈরি বিশেষ টি-শার্ট ও মাথায় টুপি হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

বিকালে সমাবেশস্থলে দেখা যায়, বিভাগের হাজারো নেতাকর্মী ভিড় করেছেন সেখানে। এ সব নেতাকর্মী রাতে অবস্থান করছেন মাঠের তিনপাশে তৈরি করা ২০-২৫টি ক্যাম্পে। ওই সব ক্যাম্প আবার শনিবার সকালে সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা নিয়েও সিলেটে এসেছেন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গণসমাবেশে যারা আগাম এসেছেন এবং যারা মাঠে থাকতে চান তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থাসহ শৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে বলেন, “সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে মাঠে পানি ছিটানো হয়েছে। যাতে ধুলোবালি না উড়তে পারে।”

রাতের মধ্যে সিলেটে আরও হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হবেন উল্লেখ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “স্মরণকালের সমাবেশ হবে সিলেটে। আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরেই বাধার সম্মুখীন হয়ে আসছি। এবার কোনো বাধাই আমাদের রুখতে পারবেনা বলি বিশ্বাস করি।”

পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে সরকার ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষ আসবে।

অপরদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে অনুষ্ঠিত কৃষক দলের ‘কৃষক সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন।

সার,বীজ, ডিজেল,কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো এবং কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি দুর্ভিক্ষের কথা বলেছেন। দুর্ভিক্ষ তো আসবেই। আর সেটা আসবে গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে। এখনও সময় আছে নিরাপদে প্রস্থান করুন। তা না হলে রেহাই নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে ৫ গুণ। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ গুণ। তাহলে এখন কৃষকরা কোথায় যাবে? তাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।

সমাবেশ থেকে ফিরে গিয়ে কৃষকদের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের মতো তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) আর সুযোগ দেওয়া হবে না। তাই পরিষ্কার করে বলছি, এখনই পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

কৃষক দলের সাবেক সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকার কৃষকের জন্য কোন কাজই করছে না। কৃষি কাজের সব উপকরণ এর দাম বেড়িয়েছে। অপরদি‌কে চাল-ডাল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেছে।

তিনি বলেন, আমার নেত্রীকে বন্দি করে রেখেছেন। যদি কথায় কাজ না হয় তাহলে হাতুড়ি নিয়ে আসব জেলের তালা ভাঙবো আমার নেত্রীকে বের করব। একটু অপেক্ষা করছি ডাক আসলে সারা বাংলাদেশের মানুষ যে নেত্রীকে ভালোবাসে সেই নেত্রীর জন্য ঢাকায় অবস্থান নেবে নেত্রীকে মুক্ত করবে।

সভাপতির বক্তব্যে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিন বলেন, অবিলম্বে কৃষি উপকরণের দাম না কমালে সচিবালয় গণভবন ঘেরাও করা হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান প্রমুখ।