আজ শ্রীমঙ্গল-কুলাউড়া-রাজনগর ও বড়লেখা মুক্ত দিবস

    0
    282

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬ডিসেম্বর,জহিরুল ইসলাম: আজ ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শত্রু মুক্ত হয় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখা উপজেলা।
    কুলাউড়া মুক্ত দিবস: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার গাজিপুর চা-বাগান এলাকায় ৫ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকবাহিনী ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া ছেড়ে রাজনগর হয়ে মৌলভীবাজারে চলে যেতে বাধ্য হয় এবং কুলাউড়া মুক্ত হয়।

    স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হলেও পৃথিমপাশার গণকবরের পূর্ণাঙ্গতা পায়নি।পুষাইনগরের শ্মশানঘাট দিঘীর পাড়ে ১৪ জন শহীদের গণকবরের জায়গায় গোবর ফেলা হচ্ছে,নেই সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা। গণকবর সংরক্ষণের দাবি জানান কুলাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুশিল দেব। তবে মৌলভীবাজার-২ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খানের প্রচেষ্টায় কুলাউড়ার ডাক বাংলো প্রাঙ্গনে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
    শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস: এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে পালিয়েছিল পাকহানাদার বাহিনী। তবে এই মুক্তির স্বাদ নিতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে চা-বাগান ঘেরা এই জনপদের মানুষকে। পাকবাহিনীর সদস্যরা ২৮ এপ্রিল অস্থায়ী দুটি ক্যাম্প করে শহরের ওয়াফদা ভবন এবং বর্তমান চাশিল্প শ্রম কল্যাণ ভবনে। ৩০ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী যুদ্ধের বাংকার বানানোর কথা বলে শহর সংলগ্ন ভাড়াউড়া চা-বাগানে এক সঙ্গে ৫৫ জন চা-শ্রমিকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর গুলি চালায়। এভাবে উপজেলার পাঁচটি স্থানে গণহত্যা চালায় তারা। পরিশেষে ডিসেম্বরের ৪ ও ৫ তারিখ মুক্তি বাহীনি ও মিত্রবাহিনীর দুটি টিম শ্রীমঙ্গলের দিকে আসার সংবাদ শুনে পিছু হটে পাকবাহিনী সদস্যরা। এরপর থেকে ৬ ডিসেম্বরকে স্থানীয়ভাবে হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর বুলেটে নিহত হন উপজেলার ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে সাধু বাবার তলীর কাছে বধ্যভূমি ৭১ নামে।

    বড়লেখা মুক্ত দিবস: ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমের উদ্বেল বড়লেখাবাসী জেগে উঠেছিল ঝংকারে। প্রায় ৩২৫টি গ্রাম যেন প্রতিরোধে এক একটি দুর্গে পরিণত হয়। বড়লেখার প্রতি কণা মাটি ফুঁসে উঠে আগ্নেয়গিরির অবিনাশী ক্ষমতায়। টানা নয় মাস স্বাধীনতার দুর্নিবার স্বপ্নে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে লড়েছে বড়লেখার মুক্তিকামী সংগ্রাম জনতা।

    রাজনগর মুক্ত দিবস: যুদ্ধের শুরুতে জেলা হেড কোয়ার্টার থেকে রাজনগর উপজেলায় পাকবাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়। পরে অক্টোবরের দিকে রাজনগর থানায় অস্থায়ী ক্যাম্প করে পাকবাহিনী। এই উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সরাসরি কোনো যুদ্ধ হয়নি।কিন্তু পাচগাঁও, খলাগ্রাম, পে শ্বর,মনসুর নগরসহ ১১টি স্থানে ব্যাপক গণহত্যা চালায় পাকবাহিনীর সদস্যরা। খলা গ্রামের ধরের বাড়িতে ১৪ জনকে ব্রাশফারার করে হত্যা করে হানাদাররা। আজও সেই স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে ধরের বাড়ির পুরোনো জীর্ণ ভবনটি।

    এদিকে পাঁচগাও গ্রামে ৭৬ জনকে পুকুরপাড়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৬ ডিসেম্বর রাজনগরকে হানাদার মুক্ত করা হয়। সে সময়ের ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মৌলভীবাজার জেলার চারটি উপজেলা শহরের পালিত হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস।মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সামাজিক সাহিত্য, সাংস্কৃতিক সংঘঠন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।