আজ বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে

    0
    294

    আমারসিলেট24ডটকম,১৩মেঃ আজ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিঞ্জান লাভ ওমহাপরিনির্বান এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্টতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটিবুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে ২ হাজার ৫৫৭ বছর আগেইএই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ওমহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নামদেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
    যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব পালনের লক্ষ্যে নানাকর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো:আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আজসরকারি ছুটির দিন। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাবৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৌদ্ধ‘সম্প্রদায়েরনেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
    বৌদ্ধবিহার সূত্রজানায়, সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে। পরে বুদ্ধপূজা, মহাসংঘদান, মহা অষ্টপরিস্কারদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি পালিতহবে। এরমধ্যে জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিতহবে বিশেষ প্রার্থনা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধ বিশ্বেরমানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন।
    মানবজীবনের দুঃখ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনেরপ্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণউদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন। এক সময়রাজপ্রাসাদের বিত্ত-বৈভব ও সুখ এবং স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধি লাভেরপন্থা অন্বেষণে তিনি বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে।দীর্ঘ ৬ বছর সাধনার পর গৌতমবুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন।
    বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষথেকে আজ সকাল ৮টায় কমলাপুর ধর্মরাজী বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি বর্ণাঢ্যশোভাযাত্রা বের হয়। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ সকাল ৮টায় জাতীয়জাদুঘর এর সামনে থেকে সন্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি শোভাযাত্রাবের করে। সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এবং ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শান্তি শোভাযাত্রারউদ্বোধন করেন।

    রাষ্ট্রপতির বাণী
    শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমাউপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, তিনি বিশ্বাসকরেন আজকের এ অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজেশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেপারে । তিনি শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা-২০১৪ উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ- এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িতই হল শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা।
    রাষ্ট্রপতি বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণএকটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন।‘অহিংস পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এই বাণী আজও সমাজের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। তারনির্দেশিত পথ ও মত এবং শান্তির ললিত বাণী পরমতসহিষ্ণু ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজবিকাশে সহায়ক বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন। বিত্তের মধ্যে বড় হয়েও তিনি (বুদ্ধ)উপলব্ধি করেছিলেন ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ এ কথা উলে¬খ করেআবদুল হামিদ বলেন, তার এ মর্মবাণী মানব আত্মাকে পরিশুদ্ধ এবং শান্তিময় করেতুলতে পারে।
    মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, আবহমান কাল থেকে এদেশের মাটি ও মানুষেরসাথে বৌদ্ধদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা ও কৃষ্টি গভীরভাবে মিশে আছে। তিনিবলেন, আমি বিশ্বাস করি বিদগ্ধ গবেষক, পণ্ডিত ও বৌদ্ধ চিন্তাবিদগণ তাঁদেরঅনুসন্ধিৎসু গবেষণার মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন সভ্যতা, কৃষ্টি ওঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় তুলেধরবেন।
    বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেরাষ্ট্রপতি বলেন, এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্মও আচার অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে। এটা আমাদের সম্প্রীতির এক অনুপমঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে বৌদ্ধসম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালনে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহতরাখবেন বলে রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন। তিনি শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষেগৃহীত সকল কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।

    প্রধানমন্ত্রীর বাণী
    শুভবুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিংসায়উন্মত্ত পাশবিক শক্তিকে দমন করার জন্য আজকের পৃথিবীতে মহামতি গৌতম বুদ্ধেরশিক্ষার একান্ত প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ভয়, লোভ-লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন মানুষের কল্যাণ এবং শান্তিপ্রতিষ্ঠায় অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ওসম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর (বুদ্ধ) একমাত্র লক্ষ্য।
    প্রধানমন্ত্রীগৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ এবং মহাপ্রয়াণের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্রবুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে আন্তরিকশুভেচ্ছা জানান। তিনি বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবেউল্লেখ করে বলেন, এ দেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ-নিজ ধর্মনির্বিঘ্নে প্রতিপালন করে থাকেন।
    বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও যুগ যুগ ধরেবাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেনউল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি জ্ঞান, মেধা, কর্মদক্ষতা ওকৃতিত্বে এ দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় গৌতম বুদ্ধের আদর্শে আরও উজ্জীবিত হবে।তিনি বলেন, গৌতম বুদ্ধের অহিংস, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী এবং তার জীবনাদর্শধারণ ও লালন করে আমরা এ দেশকে একটি মানবিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশহিসেবে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুদ্ধপূর্ণিমা সকলের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক- এ কামনা করছি।