আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস 

    0
    298
    সাদিক আহমেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃবিশ্বকবি,কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়-
    ভালোবেসে সখী নিভৃতে,যতনে
            আমার নামটি লিখো– তোমার
        মনের মন্দিরে।
              আমার পরানে যে গান বাজিছে
    তাহার তালটি শিখো– তোমার
               চরণমঞ্জীরে॥
    প্রেম পিয়াসী প্রেমের কবি জীবনানন্দের কবিতায়- আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
    আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
    তবে প্রেম ভালোবাসা ঢ়ে শুধু কবি সাহিত্যিকদের কবিতা কিংবা কাব্যগ্রন্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো তা নয় বরং যুগ যুগান্তর ধরে প্রতিটি মানুষ মনের গভীরে লালন করে আসছে প্রেম,ভালোবাসা।বলার অপেক্ষা রাখে না,অর্থাৎ আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।যার আরেক নাম ভ্যালেনটাইনস্ ডে।
    একদিকে ঋতু রাজ বসন্তের বহমান ফাল্গুনী বাতাসের সঙ্গে কোকিলের কুহুতান অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস।সবকিছু মিলে প্রকৃতি যেন অন্যরকম এক রূপ ধারণ করেছে।অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস যেন ঋতুরাজ বসন্তের প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে আরো প্রেমপিয়াসী রূপে।
    আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী,বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।প্রতিবছর সারাবিশ্বে এই দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।আজ ভালোবাসার দিন,ভালোবাসাবাসির দিন।আজ মানুষের মনের আত্নার মিলনের দিন।আজ মনের সকল পশুত্ব দূর করে মনকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করার দিন আজ।
    আজকের দিনটি মূলত স্পেশাল সদ্য বিবাহিত দম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য।মূলত এই ধরণের যুগলদের কাছেই ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশেষ একটি উৎসবের দিন।
    ঘড়ির কাটায় ঠিক ১২ টা বাজার সাথে সাথেই যুগলরা মেতে উঠেন এই দিবসটির আমেজে।ছোট্ট ছোট্ট এসএমএস আর এমএমএস-এ যুগলরা মনের লথাকথা লিখে গড়ে তোলেন কল্পনার বিশাল প্রেমের কাব্যগ্রন্থ।সবাই ব্যস্ত থাকে নিজের মনের মানুষটিকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর উপমা সাজিয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য।
    এদিন শহরগুলো জেগে উঠে অন্যরকম এক প্রাণচাঞ্চল্যে।বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দেখা যুগলদের উপচে পড়া ভীড়।মূলত ভালোবাসা দিয়ে দিনটি উদযাপন করার জন্যই যুগলরা শত শত আয়োজনে থাকে ব্যস্ত।একসাথে বসে মনের ভাব বিনিময় হালকা খুনসুটিতে দিনটিকে উদযাপন করে থাকেন তারা।
    এদিনের আরেকটি  স্পেশাল হচ্ছে গিফট সামগ্রী কিংবা উপহার বিনিময়।মনের মাধুরি মিশিয়ে নানান ধরণের স্মরণীয় গিফট তুলে দেন একে অপরের হাতে।চকোলেট বক্স,শোপিস,ঘড়ি,কার্ড,পারফিউম ইত্যাদি গিফট থাকে তাদের পছন্দের তালিকায়।আর তাইতো দিনটিতে কসমেটিকস সামগ্রীর দোকান গুলো পরিপূর্নতা লাভ করে যুগলদের সমুদ্রে।
    শুধু যে প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা দম্পতিরাই দিবসটি উদযাপন করে এমনটা নয়।এদিনে মা-বাবা,ভাই-বোন,বন্ধু-বান্ধব সবাই মেতে উঠেন ভালোবাসার এই উৎসবে।সবার একটাই উদ্দেশ্যে।মনের ভালোবাসাটুকো সবার সাথে ভাগ করে নেয়া।
    ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ ফেব্রুয়ারী  ভালোবাসা  এবং অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত হয়। দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে, যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয় ।
    মূলত খ্রিস্টান ধর্ম থেকে উৎসবটির প্রচলন।ইতিহাস ঘেটে জানা যায়-২৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয়  ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪  ফেব্রুয়ারী ছিল। অতঃপর ৪৯৬ খিস্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিউস ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
    তবে কালক্রমে ও অসামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটায় পাশ্চাত্যের অনেক দেশে দিনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।১৭৭৬ সালে প্রান্স ফ্রান্স সরকার দিনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।ইংল্যান্তডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
    এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও জার্মানীতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।২০১৭ সালে পাকিস্তান সরকার দিনটি ইসলাম বিরোধী বলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।যদিও বাংলাদেশে দিনটি রাষ্ট্রীয় ভাবে উদযাপন কিংবা ঘোষিত কোনো ছুটির দিন নয় তবুও বাঙ্গালীদের অনেকে মনের আবেগে নিজেদের মতো করে দিনটি উদযাপন করে থাকেন।
    সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন,ভালোবাসা দিবসের মতো বছরের প্রতিটি দিন যদি এইভাবে সবার মনে ভালোবাসা বিরাজ করে তবে সমাজটা পুরোপুরিই বদলে যাবে যেখানে থাকবে না কোনো হানাহানি,হিংসা-বিদ্বেষ।দিবসটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই যেন মা-বাবা,বন্ধু-বান্ধব,ভাই-বোনসহ সবাইকে সবসময় ভালোবাসতে পারে সেটাই আমাদের কাম্য হওয়া উচিৎ।