আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মদিন

    0
    270

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চ‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল ভালোবাসি/রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেই সব গোলাপের একটা গোলাপ/গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি; আমি তার কথা বলতে এসেছি।’ ‘সেই কবিতাটি লেখা হয় নাই/ লিখবেন কোন কবি/সেই কবিতাটি কবিতা তো নয়/মুজিবের মুখচ্ছবি।’

    শুধু নির্মলেন্দু গুণ কিংবা মহাদেব সাহা নন। হাজারো কবির কবিতার মধ্যমণি হয়েছেন তিনি। অমরত্ব লাভ করেছেন হাজারো গায়কের গানের কলিতে। তিনিই তো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি। তার পথই তো পথ, উজ্জ্বল দ্যুতি মানুষের। কোটি বাঙালির  হৃদয়কুঠিরে জায়গা করে নেয়া সেই অবিনাশী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মদিন আজ।

    ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সাহেরা খাতুনের কোলজুড়ে বাঙালির বহু শতাব্দীর পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের জাতির পিতা ও স্বাধীনতার এই মহানায়ক।
    প্রতিবারের মতো গোটা জাতি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে ‘শিশু দিবস’ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ ও পালন করবে। এসব কারণেই ১৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিনটি সরকারি ছুটি হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়েও নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। পথঘাট, অলিগলিতে বাজবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।
    জাতির এবং তার পরিবারের সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে সারাদেশের মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
    বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল কাটে টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই। টুঙ্গিপাড়া প্রথমে কোটালীপাড়া ও পরে গোপালগঞ্জ থানার অন্তর্গত ছিল। মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওর-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি অবস্থিত। স্বাধীনতা লাভের পর টুঙ্গিপাড়াকে পৃথক থানা করা হয়।
    টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত।
    শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা-পীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার।
    আর পাড়া-প্রতিবেশী দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট তাকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত করে তোলে। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে, সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথা নত করেননি।
    চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
    পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তার চোখের অপারেশন করা হয়। এই সময়ে কয়েক বছর তার পড়াশোনা বন্ধ থাকে।
    ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এ সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
    এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। প্রতিষ্ঠা পান ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ।
    ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ
    মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে এই সংগঠনটিই মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে
    আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এবং শেখ মুজিবুর রহমান কালক্রমে এর ধারক-বাহক হয়ে
    ওঠেন। ‘৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ‘৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী
    আন্দোলন ও ‘৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব
    আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু।
    বাঙালির অধিকার
    আদায় করতে গিয়ে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো কেটেছে কারাগারের অন্ধকার
    প্রকোষ্ঠে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগ প্রধান
    হিসেবে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির সনদ
    ঐতিহাসিক ছয় দফা।
    ‘৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভূ্যত্থানের মধ্য দিয়ে কারামুক্ত করে বাঙালি তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে উপাধি দেন ‘বঙ্গবন্ধু’। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। তারপর স্বাধিকার আন্দোলন ও চূড়ান্ত পর্বে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির একমাত্র পরিত্রাতা। তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তির মন্ত্রে দীপ্ত করে বাঙালিকে।
    তারপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলে দেশ। শুরু হয় ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ, রক্তে ভাসে স্বদেশ।
    বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। মৃত্যুর মুখে প্রাণ তুলে দেয় বাঙালি। মুক্তি জপেন
    বঙ্গবন্ধু। বাঙালি তুচ্ছ করে মৃত্যুভয়, পিছু হটায় পাকসেনা, তাদের এদেশীয়
    দোসরকে। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালির মণিকোঠায় চিরতরে
    অঙ্কিত হয় এক কালজয়ী মানুষের মুখ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ১০
    জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন।
    সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। কিন্তু সে
    স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি।
    কর্মসূচি: জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায়
    বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে।
    এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন। এছাড়া সেখানে শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
    আজ দুপুর ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসবেক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।যায়যায়দিন।