আজ আনুগত্য ও আত্মত্যাগের চুড়ান্ত নজির

    0
    240

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরমুসলিম জাতির পিতা হজরত  ইব্রাহিম (আঃ)-এর পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক একটি ঘটনা হচ্ছে বর্তমান মুসলিম সমাজে প্রচলিত কুরবানির পূর্বইতিহাস। মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু নবী হজরত ইব্রাহিম (আ) আল্লাহ প্রদত্ত অনেকগুলো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং তার ঈমানি বলে প্রতিটি পরীক্ষাতেই তিনি কৃতকার্য হন। যার একটি হচ্ছে আজকের এই আনুগত্য ও আত্মত্যাগের চুড়ান্ত নজির ঃ-

    হজরত ইব্রাহিম (আ) দীর্ঘ দিন সন্তানহীন ছিলেন। জীবনের শেষ লগ্নে একটি ছেলে সন্তান লাভ করেন। হজরত ইসমাইল (আ) জন্মগ্রহণ করলেন। অতি আদরের পুত্র ইসমাঈল শৈশব পেরুনোর আগেই একদিন স্বপ্নে হজরত ইব্রাহিম (আ)-কে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ এলো।তিনি ১০০ উট কুরবানি করলেন। ।আবারো স্বপ্ন দেখলেন সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের কোরবানি করো। আবার ১০০ উট কোরবানি করলেন। পরের রাতে একই স্বপ্ন দেখলেন, তিনি বুঝতে পারলেন  স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা  দেখানো হচ্ছে  তা ভিন্ন কিছু। এবার তিনি স্পষ্ট হলেন হজরত ইসমাইল (আ)-কে কোরবানি করার নির্দেশ পেয়েছেন। সেদিনই তিনি পুত্র সন্তানের কাছে স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করলেন এবং তাকে জবেহের প্রস্তুতি নিলেন। যেমন পিতা তেমন পুত্র, সাথে সাথে হজরত ইসমাইলও (আ) রাজি হয়ে গেলেন। তাঁকে কুরবানি করতে নিয়ে গেলে আল্লাহ বেহেশত থেকে পশু পাঠিয়ে ইসমঈলের বদলা কুরবানি করালেন। কঠিন এই ঈমানি পরীক্ষায় হজরত খলিলুল্লাহ ইব্রাহিম (আঃ) সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হলেন।

    এরই ধাবরাহিকতায় আজকের কুরবানি ওয়াজিব হয় মুসলানদের উপর। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে কিছু ঈমানি পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। হজরত ইব্রাহিমের (আ) এই কুরবানি থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, প্রভূর সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেকোন সময় যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে বাধ্য, তা যত কঠিই হোক না কেন। এটাই ঈমানের দাবি। কারণ আল্লাহর আনুগত্য আমাদের উপর ফরয। আমরা যদিও বাহ্যিকভাবে শুধু একটি পশু জবাই করে থকি। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে মনে হজরত ইব্রাহিমের সেই চেতনা জাগ্রত হতে হবে। মহান আল্লাহ এটাই শুধু চান স্বীয় বান্দার কাছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরাআনে তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমাদের কুরবানির পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই দেখেনা। তিনি শুধু তোমাদের অন্তরের তাকওয়াটাই (আল্লাহর ভয়) দেখে থাকেন।” [সুরা হজ : ৩৬]

    আমাদের জীবনের সবকিছুই যে শুধু আল্লাহর জন্য হতে হবে। তাঁর প্রদত্ত বিধান মতে, একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের জন্য জীবনের সব কাজ পরিচালিত হবে। এরও একটি নজির এই কুরবানি। যেমন আল্লাহ বলেন, “বলো! নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছু একমাত্র আল্লাহর জন্য।” [সুরা আনআম : ১৬২]

    এজন্যে মহান এই সত্তার আনুগত্য ও তাঁর জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগই শাশ্বত এই কুরবানির বিধান। তাই এই পশু কুরবানির সাথে নিজের পাশবিক সত্ত্বাকেও কুরবানি করে আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সমস্ত অপকর্ম থেকে মহান মুনিবের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। লেখক : লুৎফুর রহমান তোফায়েল,সিলেট।