আগামী ৩০ এপ্রিল জেলহত্যা মামলায় আপিলের রায়

    0
    419
    আগামী ৩০ এপ্রিল জেলহত্যা মামলায় আপিলের রায়
    আগামী ৩০ এপ্রিল জেলহত্যা মামলায় আপিলের রায়

    ঢাকা, ১৭ এপ্রিল : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষে আগামী ৩০ এপ্রিল রায়ের দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ। আজ বুধবার পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করে। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে অংশ নেন। দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন আনিসুল হক। আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে আপিল শুনানি করেন এ মামলায় এটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত প্রধান প্রসিকিউটর আনিসুল হক।
    এদিকে গত ১৫, ২২ ও ২৩  জানুয়ারি আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করা হয় এবং ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় উপস্থাপন শুরু করা হয়। এরপর যুক্তি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী আনিসুল হক বলেছেন, ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রাষ্ট্রপক্ষের ছিল না। তিনি বলেন, সে সময়ে এ মামলার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এর ফলেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট।
    আনিসুল হক আরো বলেন, মামলাটির দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে, অপরাধ সংগঠন। অপরটি হলো ষড়যন্ত্র। সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তারা কারাগারে এসে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে, অন্য একটি দল এসে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে তাদের মুত্যু নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, বঙ্গবভবনে ষড়যন্ত্রের বৈঠকে এ দুই দল সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তাই এদিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারা সেখানে যাবেন, সেটা নির্ধারণ হয় বঙ্গভবনের বৈঠকে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের লিভ টু আপিল আবেদন ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ মঞ্জুর করে। একইসঙ্গে ওই আদেশে দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি আবুল হাসেম মৃধাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। অন্যথায় এ দুজনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় আদালত। এছাড়া আপিলের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে জমা দিতে নির্দেশ দেয়। আপিল শুনানির জন্য সারসংক্ষেপ (কনসাইজ স্ট্যাটমেন্ট) গত ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগে জমা দেয়া হয় এবং মামলায় আপিল শুনানির জন্য ২৫ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ দাখিল করা হয়।
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। এ নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
    এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেয়। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে।