আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্রঃযোগাযোগমন্ত্রী

    0
    245

    আমার সিলেট  24 ডটকম,০৫নভেম্বরঃ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তিনি জানান, চলতি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চলতি সপ্তাহেই মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন। আমি নিজেও পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছি। এ সময় ওবায়দুল কাদের সর্বদলীয় সরকার গঠনে সহযোগিতা করতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান।

    এর আগে গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী  সকল মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা  দেয়ার নির্দেশ দেন।
    সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সকল মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্দেশ্যেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে এ সরকার গঠনের পরিকল্পনা আপতত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা যায় । গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মন্ত্রিসভার সব সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।

    সূত্র মতে জানা যায়, আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বলে দিয়েছেন যে, সর্বদলীয় সরকারে সবাইকে রাখা যাবে না-এ নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না। সবাইকে আগামী নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হতে হবে সেটিই বড় কথা। তিনি আরও বলেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেই তার আশা। তবে না আসলেও বিএনপির অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন এরকম তথ্য তার (প্রধানমন্ত্রীর) কাছে আছে। এ ক্ষেত্রে তিনি বিএনপির সংস্কারবাদীদের দিকেও ইঙ্গিত করেন বলে অনুমান করা হচ্ছে ।
    সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি না আসলেও যথাসময়ে তার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকার গঠন হবে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। সর্বদলীয় এ সরকারে আওয়ামী লীগের ১০ জন, জাতীয় পার্টির পাঁচজন, ওয়াকার্স পার্টির একজন, জাসদের দুইজন, জেপির একজন, অন্যান্য বামদল থেকে একজন সর্বদলীয় সরকারে নেয়ার চিন্তা রয়েছে।

    প্রতি দশ জনে একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় নেয়ার সাংবিধানিক সুযোগ রয়েছে। এজন্য এসব দলকে আহবান জানানো হবে। কেউ সরকারে যোগ না দিলে সেক্ষেত্রে আলোচ্য অনুপাত কমবেশি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এমন ইঙ্গিত দেন যে, অনির্বাচিত কাউকে এ সরকারে রাখা-না রাখার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে,আরও হতে পারে। আর বিএনপির কেউ বা পুরো দল নির্বাচনে আসলে সে ক্ষেত্রে চিত্র পাল্টে যাবে বলে ধারনা রয়েছে।
    সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই আগাম পদত্যাগের নির্দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যেন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সহজ হয়। সর্বদলীয় সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সকল উপদেষ্টাকে রাখা নাও হতে পারে।
    অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার জন্য তফসিল ঘোষণায় তাদের যতটুকু অপেক্ষা করা সম্ভব, তা তারা করবেন। তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বহাল থাকলে এই অপেক্ষার কাল ২০ নভেম্বরের পর গড়াবে না বলে কমিশনের একটি সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, সর্বদলীয় সরকার গঠনকালে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সদস্য বাদ পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে আছেন, স্বরাষ্ট্র, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, স্থানীয় সরকার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পরিকল্পনা, রেলপথ, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, আইন, ধর্ম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুত্ এবং জ্বালানি, বাণিজ্য, ভূমি, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, শিল্প, পানি সম্পদ, নৌ-পরিবহন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
    সূত্র জানায়, অনুল্লেখ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। এ ছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্য সাংসদদের মধ্যে থেকেও নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রী নেয়া হতে পারে।
    সূত্র জানায়, এসব মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রতিমন্ত্রীদের কেউ কেউ পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন আবার নির্বাচনের সময়ের জন্য একেবারেই বাদ যেতে পারেন। এ বিষয়টি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও অন্য দল থেকে নেয়া সদস্যদের হাতে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
    অন্যদিকে,গতকালও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কোন সরকারে বা নির্বাচনে যাবে না তারা। অবশ্য, এর এক দিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লোক আছে। এরকম কথা চালাচালির মধ্যেই গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ওই ইঙ্গিত বিএনপির অনেকের নির্বাচনে আসার গুঞ্জনে বাড়তি প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে বলেও বিজ্ঞ জনদের ধারনা।