আখতার রেযা খান আযহারীর ইন্তেকালে বিশ্বে শোকের ছায়া

    0
    644

    “নবীরায়ে আ’লা হযরত, তাজুশ শরীয়াহ সৈয়দী আখতার রেযা খান আল আযহারীর ইন্তেকাল-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’ঊন”

    আবছার তৈয়বীঃ পৃথিবীতে বিশ্বনন্দিত যে কয়জন সুন্নী স্কলার আছেন, তাঁদের মধ্যে নবীরায়ে আ’লা হযরত (রহ.), হুজুর তাজুশ শরীয়াহ সৈয়দী আখতার রেযা খান আল আযহারী অন্যতম। তিনি আকীদায় সুন্নী, মাযহাবে হানিফী এবং তরিকায় কাদেরী ছিলেন। ছিলেন-যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফকীহ। তিনি ছিলেন-পুরো ভারতের গেজেটেড গ্রান্ড মুফতি। ইলমে ফিকাহতে তাঁর অতুল পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘হুযূর তাজুশ শরীয়াহ’ নামে সমধিক পরিচিত এবং সর্বমহলে বরিত।

    তাজুশ শরীয়াহ আখতার রেযা খান আল আযহারী (রঃ)

    দীনের মুবাল্লিগ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী তাঁর সুনাম আছে। বহির্বিশ্বে সুন্নীয়ত প্রচারেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জর্ডানের royal islamic strategic studies centre in amman jordan এর জরিপ ও গবেষণা মতে, সারা বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ইসলামী ব্যক্তিত্বের মধ্যে তাঁর অবস্থান ২২ তম।২০ জুলাই বা’দ মাগরিব বেরেলী শরীফে নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’ঊন।

    তাঁর ইন্তেকালে পুরো ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর প্রতিটি সুন্নী অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, হুযূর তাজুশ শরীয়াহর ইন্তেকালের খবর সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর হাজার হাজার শোকার্ত জনগণ তাঁর প্রতি তাদের নজরানায়ে আকীদত পেশ করার জন্য বেরেলী শরীফে ভিড় জমিয়েছেন। দরবারে আ’লা হযরতের মুখপাত্র মুহাম্মদ সলিম নূরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, হুজুর তাজুশ শরীয়াহ দীর্ঘদিন থেকে নানা শারীরিক দূর্বলতা ও অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় এবং আজ জুমাবার সন্ধ্যা ৭:২৫ টায় ইন্তেকাল করেন।

    জর্ডানের royal islamic strategic studies centre in amman jordan এর জরিপ ও গবেষণা মতে, সারা বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ইসলামী ব্যক্তিত্বের মধ্যে তাঁর অবস্থান।

    হুযূর তাজুশ শরীয়াহ্ আরবি, উর্দু ও ইংরেজিতে ৫০টিরও অধিক গ্রন্থ রচনা করেন এবং সৈয়দী আ’লা হয়রত (রহ.)’র বেশ কিছু গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করেন। আবার বেশ কিছু আরবি গ্রন্থও উর্দুতে অনুবাদ করেন। তিনি শুধু ভাবতীয় উপমহাদেশের উলামাদের কাছে একচ্ছত্র ইলমী শিরোতাজ ছিলেন না, বরং আরব বিশ্বের উলামাদের মাঝেও সাদরে বরিত ছিলেন। এমনকি ভিন্ন মতাবলম্বী উলামারাও তাঁকে বেশ সম্মান ও সমীহ করতেন। সারা বিশ্বে হাতেগোনা যে ক’জন ইসলামী ব্যক্তিত্ব পবিত্র কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ ও সম্মান লাভ করেছেন, হুযূর তাজুশ শরীয়াহ্ ছিলেন সেই সৌভাগ্যশালীদের অন্যতম একজন।

    বর্তমান বিশ্বে আরবের ইসলামী স্কলারগণ তাঁকে একজন জ্ঞানী, বাগ্মী ও প্রতিথযশা ইসলামী আইনজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। নিজের আকিদা-ও আমলে অটল-অবিচল থেকেও সুন্দর আচরণ, অমায়িক বযবহার, ভালোবাসা ও বাগ্মীতা দিয়ে তিনি শত্রু-মিত্র সকলেরই মন জয় করে নিয়েছেন। বলতে গেলে আরব বিশ্বে সৈয়দী আলা হযরতের মিশনকে তিনিই প্রথম পরিচিত করে তোলেন।

    হুজুর তাজুশ শরীয়াহ আল্লামা আখতার রেযা আল আযহারী (রহ.) ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩ খৃ. মোতাবেক ২৬ মুহাররম ১৩৬২ হিজরি সালে ভারতে বেরেলীতে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ইলমী পরিবেশে তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। এরপর তিনি ঘরের পাশের মাদ্রাসায়ে মানজারুল ইসলামে ভর্তি হন। মাধ্যমিক শিক্ষা ও ইলমে দীন শেখার পর তিনি বেরিলী ইসলামিক কলেজে লেখাপড়া করেন পরবর্তীতে তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মিসরের বিখ্যাত আল আযহারে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে শিক্ষা সনদের সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ রেকাল্টের জন্য তিনি “ফখরুল আযহার” (আযহরের গর্ব) খেতাবে ভুষিত হন এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের তাঁর হাতে কৃতিত্ব সম্নাননা তুলে দেন।

    হুযূর তাজুশ শরীয়াহ্ আল্লামা আখতার রেযা আল আযহারী (রহ) আলিম হিসেবে যেমন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তেমনি মানুষ হিসেবে খুবই সজ্জন। আমি অধম গগুনাহগার বেশ ক’বার পুরোপুরি সুন্নাতের পাবন্দ এ মহান মণীষীর স্নেহ-সান্নিধ্যে যাবার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আলহামদু লিল্লাহ।

    উল্লেখ্য মহান এই আলেমে দ্বীন এতটাই পরহেজগারিতে ছিলেন যে বর্তমান ডিজিটাল জগতের প্রচার প্রচারণার প্রতি তার কোন সাদাহ্লাদ কিছুই ছিলোনা, তার জীবনী থেকে যা জানা যায় তিনি কখনো স্বেচ্ছায় অপ্রয়োজনে ছবি তুলতেন না বরং বলতেন ” যারা আমার ছবি তুলবে আমি তাদের কেয়ামতের দ্বীন ছাড়বো না।” প্রাপ্ত ছবি গুলো আড়াল থেকে নেওয়া বিভিন্ন সময়ের ফুটেজ থেকে লওয়া।