অবিরত ভালোবাসা মনে-শুধু জাগে আশাঃআবছার তৈয়বী

    0
    338

    আমি আশাবাদী মানুষ। ধ্বংসের স্তুপেও আমি খুঁজে-ফিরি ভালোবাসার সোনা-দানা। বিভেদের খরায়ও খুঁজি ভালোবাসার সতেজ সবুজ চারাগাছ। যে গাছ বড় হলে ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে আমায়/আমাদের আগলে রাখবে। বাতিল ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ভালোবাসার সেই বৃক্ষ বুক চিতিয়ে মোকাবিলা করবে এবং বিপন্ন মানবতাকে আশ্রয় দেবে। আজ সেই ভালোবাসার মহীরূহের সান্নিধ্যে গেলাম আমরা ক’জন ভালোবাসা প্রত্যাশী মানুষ।

    আমার প্রিয়ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ হাসানের আমন্ত্রণে আমার ভালোবাসার মহীরূহ, আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মুফতি, আরব বিশ্ব সমাদৃত লেখক ও গবেষক, এশিয়াখ্যাত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ, উস্তাজুল উলামা, হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আলকাদেরী (ম.জি.আ) এর বাসায় গিয়েছি দীর্ঘ ১৪ বছর পর। হুজুর আমাকে দেখেই বললেন- “আঁর পোয়া আবছারও ত আইস্যি- মাশাআল্লাহ”! (আমার ছেলে আবছারও তো এসেছে-মাশাআল্লাহ্) আমার পিতৃতুল্য উস্তাদের বরকতময় যুবানে এই কথা শুনে গর্বে ও খুশিতে আমার বুক ফুলে ওঠে। হুজুরের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দে যেন দয়া-মায়া, স্নেহ ও ভালোবাসা ঝরে ঝরে পড়ে! যেখানে এক মুঠো ভালোবাসা পেলেই আমি আনন্দে নেচে ওঠি, সেখানে এতো অধিক ভালোবাসা পাওয়ার পর আমার তো একেবারে উড়োউড়ি করতেই ইচ্ছে করে।

    আমি যাঁর সাথে গিয়েছি- তিনি আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ১৯৯০ সালেই তাঁর সাথে আমার পরিচয়। কায়ায় নয়, মায়ায়। দেখাদেখিতে নয়, লেখালেখিতে। আমি সিলেট থেকে প্রকাশিত মাসিক শাহজালালে নিয়মিত লিখতাম। তিনিও লিখতেন। আমি বাংলাদেশে আর তিনি আমেরিকায়। দু’জন দু’জনের পাঠক। আবার দু’ জন দু’জনের ভক্ত। দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি। আমি ১৯৯৪ সালে দুবাই যাওয়ার পরও সেই লেখালেখি অব্যাহত থাকে। ১৯৯৭ সালে তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় দুবাইর এমিরেটস হোটেলে। তিনি তখন হজ্বে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর এই মেহমানকে আমি সারা দুবাই ঘুরিয়ে দেখাই। এরপর দীর্ঘদিন আর দেখা হয়নি।

    দু’বছর আগে আমি সপরিবারে সিলেটে বেড়াতে গেলে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে নেমেই সেখান থেকে ফেবুতে একটি পোস্ট দেই।
    সেটি পড়ে তিনি আমেরিকা থেকেই যোগাযোগ করেন এবং তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তিনি দেশে না থাকায় আমি ইতঃস্তত বোধ করি। তিনি নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন এবং বললেন, “আমি যে বাড়িটি বানিয়েছি- সেটাতে এখনও আমি উঠিনি। আপনিই উদ্ভোধন করবেন এবং আমার রুমেই আপনি থাকবেন।” আমার মতো এক পুঁচকে লেখকের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং আন্তরিকতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বললাম, আগে আমি হযরত শাহজালাল (রহ.)’র দরগাহ শরীফে যাবো। এর পরে আপনার বাড়িতে যাবো- ইনশাআল্লাহ। তিনি ও তাঁর প্রতিনিধি নোমান আহমদ ভাই এবং মুজাক্কির ভাই অনবরত তাড়া দিতে লাগলেন। অবশেষে একরাত হোটেলে থাকার পর তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদেরকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন।

    মাশাআল্লাহ! তাঁর বাড়িতে গিয়ে আমার চোখ তো ছানাবড়া! এতো সুন্দর বাড়ি হয়! যাকে বলে একেবারে ‘প্রাসাদোপম বাড়ি’! গিন্নী আমায় গুঁতো দিয়ে বলে- ‘দ্যাখেন, কীভাবে বাড়ি বানাতে হয়!’ হেসে বললাম- ‘সবই টাকার খেলা রে গিন্নী! আমার টাকা থাকলে আমি আমার প্রিয়ার জন্য তাজমহল বানিয়ে দিতাম!’ গিন্নী আমার কথা শুনে তার মুখকে বাংলা পাঁচ বানিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম- মন খারাপ করার কিছুই নেই। শাহজাহান তাঁর প্রিয়ার জন্য তাজমহল বানিয়েছেন ইট-পাথর দিয়ে। আর আমার প্রিয়ার জন্য আমি তাজমহহল বানাবো কবিতা দিয়ে। আমার কথা শুনে গিন্নী হাসলো। প্রিয়ার এই হাসি আমি বড়ই ভালোবাসি। সেই মাঝরাতেই বাজখাঁই গলায় গাইলাম- “তোমার ওই রাঙা ঠোঁটে পূর্ণিমা চাঁদ ওঠে
    হাসিলে ঝরে পড়ে জোছনা….”। গিন্নী তাড়াতাড়ি আমার মুখে হাত দিয়ে বললো- আস্তে!

    আমার মনে শাহজাহান হওয়ার বাসনা জাগ্রতকারী আর কেউ নন, তিনি বিশ্বব্যাপী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লড়াকু সিপাহসালার, ওহাবী, মওদূদী, শিয়া এবং খবিস সালাফীদের মূর্তিমান আতঙ্ক, আলেমে বাআমল, হযরতুল আল্লামা হাফিজ ক্বারী শায়খ আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ আইনুল হুদা (হাফিজাহুল্লাহু তায়ালা ওয়া রা’আহু)। আমার এবারকার সফরে তাঁর সাথে প্রথম দেখা হয়- শহীদে মিল্লাত আল্লামা ফারুকী (রহ.)’র ওরস শরীফে। দ্বিতীয়বার ঢাকায় দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমায় এবং তৃতীয়বার চট্টগ্রামে। যতোবারই দেখা হয়- তাঁর ভালোবাসায় সিক্ত হই। আল্লাহ চাহে তো শীঘ্রই আরো অনেকবার দেখা হবে। চলবে- ভালোবাসাবাসিও। তাঁর চিন্তা-চেতনা ও আমার চিন্তা চেতনা প্রায় এক ও অভিন্ন। আমার ইলমী দৈন্যতা, আমলী শূণ্যতা, দৈহিক খর্বতা এবং আর্থিক অসচ্ছলতা জেনেও তিনি আমায় ভালোবাসেন। সতত প্রেরণা যোগান। বাতিলের বহুমূখী আক্রমণে শতধা বিভক্ত সুন্নী সমাজের যে “ঐক্যের স্বপ্ন” আমি দেখি- তিনিও তা দেখেন এবং আরো বড় পরিসরে দেখেন। ‘ইত্তেহাদ মা’আল ইখতলাফ’ হলেও আমি বৃহত্তর সুন্নী ঐক্য চাই। তিনিও তাই চান। দীনের খাতিরে সুন্নিয়তের স্বার্থে প্রিয়নবী (দরুদ)’র উসিলায় আমাদের এই ভালোবাসা আল্লাহর দরবারে কবুল হোক। আমাদের চাওয়া পূরণ হোক। সুন্নীদের মাঝে গড়ে ওঠুক ‘বুনইয়ানুম মারসূস’সম ঐক্য। হাতছাড়া ‘একতার দৌলত’ সুন্নীদের হাতের মুঠোয় আসুক। আমীন! তারিখ: ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ খৃ.চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।