আমারসিলেট 24ডটকম , ১৪ সেপ্টেম্বর : অবশেষে দেশে ফিরেছে আফরোজা খাতুন (১২)। বাংলাদেশ থেকে বেআইনি পথে মায়ের সঙ্গে ভারতে গিয়ে আটক হয়েছিল কিশোরী আফরোজা। সে এত দিন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটের হলি চাইল্ড হোমে বিডি শর্মার তত্ত্বাবধানে ছিল। আজ শনিবার সকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিশেষ মহাপরিচালক বিডি শর্মা আফরোজাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছেন। আজ রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে আফরোজাকে তুলে দেন বিডি শর্মা।
বিজিবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আফরোজাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিএসএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আফরোজা আজ ঢাকা ফিরেছে। আগামীকাল থেকে সীমান্ত সম্মেলন শুরু হচ্ছে।
আলোচিত কিশোরী আফরোজার জন্ম ২০০১ সালে নাটোর জেলার বেলঘরিয়ার শিবপুর (দাসপাড়া) গ্রামে। তার বাবা মো. আকরাম হোসেন পাবনা সদর উপজেলার জহিরপুরের বাসিন্দা। মা মনোয়ারা বেগম আফরোজার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আফরোজা ও তার বড় ভাই মুন্না পারভেজকে নিয়ে তাদের অসহায় মা মনোয়ারা বেগম কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান। দিল্লিতে দূরসম্পর্কের খালার বাসায় আশ্রয় নেন তারা। কয়েক দিন পরই তার মা মনোয়ারা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিল্লিতে চিকিৎসা নেয়ার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফিরে আসার জন্য ভারতের শিলিগুড়ি যান তারা। সেখান থেকে বালুরঘাট সীমান্তে আসার পর তুমুল বৃষ্টির কারণে সীমান্তে আটকা পড়েন। ভারতীয় পুলিশ তিনজনকেই আটক করে বালুরঘাট জেলা কারাগারে পাঠায়।
ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে মনোয়ারা বেগমকে দুই বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার রুপি জরিমানা করেন বালুরঘাট আদালত। আফরোজা তার মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকলেও বড় ভাই মুন্নাকে বালুরঘাট শুভায়ন হোমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে মনোয়ারা ও আফরোজাকে বালুরঘাট কারাগার থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর মনোয়ারা মারা যান। এ ঘটনা জানার পর আফরোজা ও তার ভাই মুন্নাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। বিষয়টি বিজিবি-বিএসএফের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরা হয়।
মনোয়ারা বেগমের মৃত্যুর পর আফরোজার স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব নেন পশ্চিমবঙ্গ কারা অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বর্তমানে অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিএসএফ-ইস্ট) বি ডি শর্মা। তিনি উদ্যোগী হয়ে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে আফরোজাকে নদীয়া জেলার (দয়াবাড়ি) রানাঘাট হলি চাইল্ড হোমে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া আফরোজা ও মুন্নাকে সহায়তার জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করেন বি ডি শর্মা। কমিশন আফরোজা ও মুন্নাকে দেড় লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়। ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট মুন্নাকে দেশে ফেরত আনা হয়। আজ দেশে ফিরল আফরোজা। আফরোজাকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে। বিদেশেও সেটি প্রদর্শিত হয়েছে। যেটি প্রযোজনা করেছেন কলকাতার গৌরাঙ্গ জালান ও পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র।