অপহরনের ৪দিন পর কনস্টেবলের বাসা থেকে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার

    1
    229

     আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫মার্চঃ সিলেট শহরে পুলিশ কনস্টেবলের বাসা থেকে অপহরনের ৪দিন পর স্কুলছাত্র আবু সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টার দিকে নগরীর ঝর্ণার পাড় সুনাতলা এলাকায় বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমানের বাসা থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।ওই এলাকার ৩৭ নং বাসার ৩য় তলা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এসময় পুলিশের এক কন্সটেবল সহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত তিন জন এ ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে শিশু সাঈদের লাশ উদ্ধার হয়।

    নিহত আবু সাঈদ (৯) নগরীর শাহ মীর(র:) সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র । সে দর্জিবন্দ বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়ার ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলাধীন জগন্নাথপুর উপজেলার খাসিলা নামক গ্রামে।

    জানা যায়,গত বুধবার ১১ মার্চ স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে অপহরন করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়। যার নং-৫৬১।
    কোতোয়ালী  থানার ওসি আসাদুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত বুধবার স্কুলে যাওয়ার পথে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর থেকে আটক ঘাতকরা শিশুর স্বজনদের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপনের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই শিশুটিকে স্বাশরুধ করে হত্যা করে বলে স্বীকার করে ঘাতকরা।

    শিশুটির পিতা মতিন মিয়া জানান, অপহরনের পর দুর্বৃত্তরা মোবাইল ফোনে প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা ও পরে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা পাওয়ার আধ ঘন্টা পর স্কুল ছাত্র আবু সাঈদকে ফেরত দেয়ার কথা বললেও অপহরনকারীরা সঠিক ঠিকানা দেয়নি।
    র‌্যাব-৯ এর সুত্রে জানা যায়, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ ও র‌্যাব তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তবে, ঘন ঘন অবস্থান বদল করায় তাদের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। এরপর শনিবার রাতে কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড় আবাসিক এলাকার ৩৭ নং বাসা থেকে শিশুটির গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
    পুলিশের হাতে আটক ৩ দুষ্কৃতকারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, হত্যার পর আবু সাঈদের লাশ গুম করতে একে একে ৭টি বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে রাখে। চিনে ফেলায় তারা তাকে হত্যার পর লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেছে বলে তারা জানান। ’
    আটক ৩ দুষ্কৃতকারীরা হচ্ছে- এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুর, জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব এবং র‌্যাব-পুলিশের কথিত সোর্স গেদা মিয়া।
    শনিবার রাতে আটকের পর তাদেরকে রাতভর কোতয়ালী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়।
    কনস্টেবল এবাদুরের বরাত দিয়ে অপর একটি সুত্র জানান, ‘সে সহ আরো তিনজন এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। এক সময় সাঈদের পরিবারের সাথে তার পরিবার একই বাসায় সাবলেট থাকতো। এই সুবাদে সাঈদের পরিবার ছিল তাদের পূর্ব পরিচিত। সাঈদকে অপহরনের পর তার বাসায় আনা হয়। কিন্তু পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তারা তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। অপহরণের পর বুধবার রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, সাঈদের লাশ উদ্ধার হওয়া বাসায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকেন। এ বাসার সদর গেইট প্রায়ই বন্ধ দেখা যেত।

    এডিসি রহমত উল্যাহ জানান, মোবাইল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে শিশু সাঈদ অপহরনের সাথে জড়িত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় এদিকে এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার সকালে নিহতের বাবা আব্দুল মতিন বাদি হয়ে এসএমপির কোতয়ালী থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
    কোতয়ালী থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমান, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব ও পুলিশের সোর্স গেদা মিয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।আপডেট