অপচনশীল পদার্থে লাউয়াছড়া হারাতে যাচ্ছে চিরচেনা রূপ

    0
    399

    রাবিশ ও পর্যটকদের ফেলে রাখা পদার্থে ভরপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল

    সাদিক আহমেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশের বৃহত্তম ও বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অন্যতম একটি।পরিচিতি ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান।বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার প্রকৃতিকন্যা ও চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাসরত কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এটি।

    ১৯২৫ সালে তদানীন্তন বৃটিশ সরকার বৃক্ষায়ন করলে পরবর্তীতে গাছের সংখ্যা বেড়ে এটি উদ্যানে রূপ নেয়।শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি।যার পূর্ব নাম ছিলো পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন।

    বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার  ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসাবে ঘোষণা করে।পরবর্তীতে যার নামকরণ হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।

    প্রতিদিন দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটন ভ্রমণ করতে আসে উদ্যানটি।সকাল শুরু হলেই পর্যটকদের অাগমনে মুখরিত হয়ে উঠে উদ্যানটি।দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যে বিদেশী পর্যটকদেরও মন কেড়ে নিয়েছে উদ্যানটি।বিদায়ী ২০১৮ সালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করতে অাসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক  মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

    কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এত জনপ্রিয়তা ও বিখ্যাত পর্যটনস্থান হওয়া সত্বেও বিভিন্ন ধরণের রাবিশ জাতীয় পদার্থ ও অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলার কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হারাতে যাচ্ছে তার চিরচেনা রূপ।সংরক্ষিত স্থানে ময়লা ফেলার ঝুড়ি ও ডাস্টবিন দেয়া সত্বেও যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের অপচনশীল দ্রব্য।এসব কারণে একদিকে যেমন লাউয়াছড়া হারাতে যাচ্ছে তার চিরচেনা গৌরব অন্যদিকে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটক মনে করছেন ভীতিকর এক ভবিষ্যতের।

    ঘুরতে আসা বিভিন পর্যটকদের সাথে কথা বললে আমার সিলেটকে তারা নানারকম অভিযোগ ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

    কুমিল্লা থেকে লাউয়াছড়া ভ্রমন করতে অাসা মোঃএপলু খান আমার সিলেটকে বলেন “বেশ জনপ্রিয়তা ও আগ্রহ থাকায় কুমিল্লা থেকে বেড়াতে এসেছি লাউয়াছড়া দেখতে।লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অপরূপ শোভা দেখে অামি বিস্মিত।সত্যিই লাউয়াছড়া অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।তবে উদ্যানের ভেতরে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও বিভিন্ন গাছপালা,বসার বেঞ্চ ও যায়গায় বিভিন্ন ধরণের মানুষের নাম,কথাবার্তা লেখা দেখে খুব খারাপ লাগলো”।

    ঘুরতে আসা স্থানীয় শ্রীমঙ্গলের এক পর্যটক তৌফিকুল ইসলাম তমাল বলেন”ভালো লাগে লাউয়াছড়ায় আসতে।প্রায় মাঝেমাঝেই আসি এখানে।গর্ব হয় অামাদের উপজেলার এই লাউয়াছড়া উদ্যানটিকে নিয়ে।কিন্তু মনটা তখনই খারাপ হয়ে যায় যখন এর ভেতরের বিভিন্ন অবস্থা দেখি।যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিন থাকা সত্বেও।তাছাড়া বসার জন্য যে জায়গাগুলো দেয়া হয়েছে ওখানে লক্ষ্য করলে দেখবেন নানান ধরণের আজেবাজে কথাবার্তা ও বিভিন্ন নাম।আসলে এগুলো দেখলে খুব খারাপ লাগে”।

    প্রায় ৩ ঘণ্টা লাউয়াছড়া ঘুরে এসে তথ্য সংগ্রহ করাকালীন ঝাড়ুদার কিংবা কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছনতাকর্মীকে দেখতে পাইনি আমরা।যদিও লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ভিন্ন কথা।

    লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বিট কর্মকর্তা মো আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি আমার সিলেটকে  বলেন “আসলে লাউয়াছড়ার ভেতরে শোভা বর্ধনের জন্য কাজ চলছে তাই রাবিশ (কংক্রিট ও ইটের ভাঙ্গা অংশ) গুলো ভেতরেই রাখা হয়েছে।কিছুদিন পরেই রাবিশগুলো এখান থেকে সরানো হবে।
    অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থের যেখানে সেখানে ফেলা নিয়ে জানতে চাইলে এ বন কর্মকর্তা আমাদের বলেন “আমাদের স্টাফরা কিছুক্ষণ পরপরই এসব পরিষ্কার করে থাকেন।তবে আমাদের একার পক্ষে কি সব সম্ভব?পর্যটকরা যদি সচেতন না হোন,ওনারা যেখানে সেখানে এসব জিনিস ফেললে অামরা কতটা সাকসেসফুল হবো ? আমরা পর্যটকদের সবসময়ই বনের ভেতরে এসব অব্যবহৃত দ্রব্য না ফেলার জন্য অনুরোধ করি”।

    পযটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন”আমাদের টুরিস্ট পুলিশরা সর্বদা এখানে ডিউটিতে থাকেন।পর্যটকদের যেনো কোনোরকম অসুবিধা না হয় ও সার্বিক নিরাপত্তা দিতে সর্বদা আমাদের টুরিস্ট পুলিশ সজাগ থাকেন”।

    প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি ব্যাপক জনপ্রিয় পুরো বাংলাদেশেই।তবে বনের ভেতরে বিভিন্ন রাবিশ জাতীয় পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলার কারণে  বনের পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির সমুক্ষিণ হচ্ছে।একদিকে যেমন মারাত্মক ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে বনটি অন্যদিকে বণ্যপ্রাণীদের জন্য উদ্যানটি হয়ে উঠছে বাসস্থানের অযোগ্য।এভাবে বনের পরিবেশ নষ্ট করলে অচিরেই লাউয়াছড়া হারাবে তারা চিরচেনা ঐতিহ্য ও গৌরব এমনটাই মনে করছেন উদ্যানটিতে আসা পযটকরা।