অত্যাচারী এজিদের ছেলে আহলে বাইত সম্পর্কে কি বললেন

    0
    782

    গোলাম দাস্তগীর লিছানীঃ এজিদের ছেলে আহলে বাইত (রা)’র প্রেমে কীভাবে জুলুম-রাজত্ব এমনকি জীবন ত্যাগ করলেন ?রাজা বানানোর সাথে সাথে মিম্বরে উঠে তাঁর হৃদয়বিদারক বক্তব্য (খুতবা) শুনুন।নিম্নে উল্লেখ করা হল।

    নিশ্চই এই খিলাফত [ইন্না হাযিহিল খিলাফাহ্]

    আল্লাহ্’র রশি [হাবল আল্লাহ্]
    (*আয়াত: তোমরা আল্লাহ্’র রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না- কুরআন)

    এবং আমার দাদা [ওয়া আন জাদ্দি মুওয়ায়িয়াতান]
    (তিনি দাদার নাম বললেন)

    নিজ পরিবারের/বংশের অবাধ্যতা করলেন/ ক্ষমতাচ্যুত করলেন/রশিচ্যুত করলেন [নাযি’ আল আমর আহলিহ]

    আর তাদের মধ্যে কে ছিলেন বেশি হক্বদার [ওয়া মান হুয়া আহাক্ব বিহ]

    তিনিই, যিঁনি ছিলেন আলি ইবনু আবি ত্বলিব রাদ্বিআল্লাহু আনহু [মানহু আলী ইবনু আবি ত্বলিব রা.]

    আর তোমাদের উপর চড়ে বসলেন যা তোমরা ঠিকই জানো [ওয়া রাকাব বিকুম মা তা’লামুন]
    (* এর পরের বাক্যটি আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়, যেহেতু তা পরম অসম্মানজনক বাক্যের মধ্যে পড়ে।)

    তারপর আমার পিতা ক্ষমতা দখল করল [সুম্মা ক্বাল্লাদ আবি আল আমর]
    আর এটাও ভিন্ন ছিল না তার পরিবারের থেকে [ ওয়া কানা গাইর আহলাহু ]

    অবাধ্যতা করল/ছেড়ে দিল/ক্ষমতাবঞ্চিত করল/রশিচ্যুত করল/শূণ্য করে দিল/মরুভূমি করে দিল [নাযি’]

    রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়ের ছেলেকে [ইবনে বিনতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]

    আর তারপর তার (এজিদের) মরার সময় এলো (فقصف عمره،)
    আর তার জন্য কবর খোঁড়া হল (و انبتر عقبه،)
    আর সে তার নিজের পাপের ঘেরে নিজ কবরে বন্দী হল ( و صار في قبره رهيناً بذنوبه،)
    আমরা তার এই জঘন্যতম মৃত্যুতে এবং এই করুণ পরিণতিতে একটা জিনিস শিখতে পারলাম (مِنْ أعظم الاُمور علينا علمنا بسوء مصرعه و بؤس منقلبه،)
    রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বংশধরের হত্যা করার কারণে ( و قد قتل عترة رسول الله صلّى الله عليه و آله و سلّم،)
    এবং মদকে হালাল করার কারণে ও ক্বাবা ধ্বংস করার কারণে ( و أباح الخمر و خرّب الكعبة،)
    খিলাফাতের মিষ্টতার স্বাদ সে পায়নি (و لم أذق حلاوة الخلافة)
    সুতরাং এটার (শাসনের) তিক্ততাকে আবার তোমরা নতুন করে বানিওনা আমার মাধ্যমে ( فلا أتقلّد مرارتها، فشأنكم أمركم،)
    আর খোদারই কসম, দুনিয়া ভাল থাকতে থাকতে আমরা ভাগ্যকে পরখ করেছি ( والله لئن كانت الدُّنيا خيراً فقد نلنا منها حظّاً،)
    আর যখন অবস্থা খারাপ ছিল (*মুসলিমদের, মক্কা বিজয়ের আগে) তখন আবু সুফিয়ানের সন্তান সন্ততি কোন ভোগান্তি ভোগেনি (ইসলামের জন্য) ( و لئن كانت شرّاً فكفى ذرّية أبي سفيان ما أصابوا )

    এজিদ (লা’নাতুল্লাহি আলাইহি) মারা যাওয়ার আগে তার বড় ছেলের জন্য বায়আত নেয় যুবরাজ (তার মৃত্য পরবর্তী রাজা) হিসেবে। এজিদের পুত্রের নাম ছিল মুআবিয়া (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রাজি ও খুশি থাকুন), যে কারনে তাঁকে ইতিহাসে মুআবিয়া-২ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

    ইমাম ইবনে হাজার হায়তামি (রাহ:) তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আস সাওয়ায়িক্বুল মুহরিকা”র ১৩৪ নং পৃষ্ঠায় বর্ননা করেন, জালিম ইয়াজিদ (লানাতুল্লাহি আলাইহি) ৬৪ হিজরি সনে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মরে পঁচে গলে যায়।

    অভিশপ্ত জাহান্নামি এজিদের সুপুত্র মুআবিয়াকে (আল্লাহ্ তাঁর উপর রাজি থাকুন) যখন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করা হলো,
    তখন তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং খুতবা দিতে শুরু করলেন, একটা মাত্র খুতবা দিয়ে তিনি ঘরের ভিতর চলে গেলেন।

    একদিনের জন্যও ঘর থেকে বেড়োননি।
    এক বেলাও শাসক হিসেবে যে কালচার ছিল, নামাজে ইমামতি করা, তা করেননি।
    একটাও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত দেননি।

    তিনি সেই যে মিম্বরে উঠেই রাজত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে পড়ে রইলেন, তারপর বেঁচে ছিলেন মাত্র ৪০ দিন।
    কেউ বলেছেন, দুমাস, কেউ বলেছেন, তিন মাস।
    মাত্র ২০ কিংবা ২১ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

    হায়রে জালিম ইয়াজিদ! আল্লাহর লা’নত তোর উপরে। কার জন্য কি করলি তুই?
    নবীবংশ ধ্বংস করার পর মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় থাকলি।
    ৬৪ হিজরি সনে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তুই জাহান্নামে চলে গেলি। নিজে রাজত্ব ভোগ তো করতে পারলিই না, যাকে ভোগ করার জন্য ঠিক করে গেলি তিঁনি ঘৃণাভরে তা ছুঁড়ে ফেললেন।

    মুআবিয়া-২ (রা.) আহলে বায়তের রক্তে রন্জিত তোর সিংহাসনকে লাথি মেরে পরিত্যাগ করলেন।

    তোর আরেক ছেলে খালিদ ইবনু ইয়াজিদ যিনি আরবের নামকরা রসায়ন বিজ্ঞানী ছিলেন তিনিও তোর সিংহাসনে বসলেন না।

    তোর জুলমের সিংহাসন এবং পাপের বোঝা তোর পরে পাপিষ্ঠ মারওয়ান ও তার বংশধররা রাজতন্ত্র নিয়ে বয়ে বেড়াল।

    নিশ্চই প্রত্যেক দুনিয়া লোভী, ক্ষমতা পাগলের জন্য ইয়াজিদ লা’নতির জীবনে আছে উত্তম উপদেশ। সংগ্রহ ও পুণ:লেখন- শ্রদ্ধেয় আল্লামা গোলাম কিবরিয়া আল আযহারী ভাইজানের লেখা ও রেফারেন্স থেকে।