অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চের পঞ্চম দিন আজ

    0
    226

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫মার্চ,ডেস্ক নিউজঃ  অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চের পঞ্চম দিন আজ। ঢাকায় চতুর্থ দিনের মতো টানা হরতাল পালিত হয়। বাঙালির আন্দোলন ক্রমেই সশস্ত্র প্রতিরোধে রূপ নিতে শুরু করে। এদিন পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় চার শ্রমিক শহীদ হন।

    আহত হন ২৫ শ্রমিক। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকাসহ সারা দেশের জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনরোষের মুখে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী সদস্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

    এদিন চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-সাংবাদিকরা পৃথক ব্যানারে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রতিটি দৈনিক সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুরতার চিত্র ও খবর প্রকাশ করে।

    সরকারি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে নির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়।

    বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী এদিনও দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ ছিল।

    তবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংক এবং অন্যান্য অফিস ২ ঘণ্টার জন্য খোলা রাখা হয়। রাজপথে বিক্ষুব্ধ জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে অনেকটাই অসহায় ছিল সরকারি বাহিনী। পূর্ব পাকিস্তানের গণবিস্ফোরণের অভিঘাতে আন্দোলিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশও।

    রাওয়ালপিন্ডিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে ৫ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা বঙ্গবন্ধু ও তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। গণ আন্দোলন ও নেতৃত্ব সম্পর্কে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার কটূক্তিতে বিপুল তেজে জ্বলে ওঠে ঢাকা অঞ্চল।

    গণবিস্ফোরণ প্রশমন করতে না পারার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান চাকরিতে ইস্তফা দেন। তার পদে নতুন নিয়োগ পান জেনারেল টিক্কা খান। এদিকে, এদিন বিকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান।

    ঢাকায় নেমেই তিনি চলে যান বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। বৈঠক শেষে আসগর খান বলেন, সংখ্যাগুরু দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের সংহতি রক্ষা করা অপরিহার্য। তবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আসগর খানের এ বক্তব্য উপেক্ষা করেন।

    পাকিস্তান সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।

    এদিন ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান।