অকাল বন্যায় সর্বহারা জুড়ী উপজেলার কৃষকরা

    0
    196

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,২৮এপ্রিল,আশরাফ আলী,জুড়ী থেকে ফিরে:এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওরের বোরো ধান অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যাওয়ার ফলে দূর্ভোগে কাঠাচ্ছেন হাওর পারের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো।

    এ হাওর পারের মানুষগুলো একমাত্র বোরো ধানের ফসল গোলায় তুলে দিনাতিপাত করেন। কিন্তু অকাল বন্যায় হাওরের সকল বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। কিভাবে তারা বছরের বাকি দিনগুলো পরিবার নিয়ে বেচেঁ থাকবেন।

    একমাত্র ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে হাওর পারের দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে নেই আর তৃপ্তির হাসি। আগে বছরগুলোতে যখন কৃষকরা নতুন ধান গোলায় তুলত, তখন কৃষকের মুখে লেগে থাকত হাসি। কৃষাণীরা ঘরে ঘরে বিভিন্ন রকমের পিটাপূলি বানাতেন। এ যেন আনন্দের এক ফোয়ারা। নবান্ন উৎসব যেন লেগেই থাকত হাওর পারের দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে। প্রতি বছরের এ আনন্দের ফোয়ারা যেন শেষ হয়ে গেলো অল্প কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে।

    সরেজমিনে জুড়ী উপজেলার হাওর পারের বেলাগাঁও এলাকায় গেলে দেখা যায় মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। কিভাবে সংসার চালাবেন, কিভাবে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন। এ নিয়ে যেন অন্ত নেই এলাকার দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে।

    এব্যাপারে কথা হয় ফারুক নামের এক কৃষকের সাথে তিনি বলেন, আমাদের সকল ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অথচ এ বোরো ধান দিয়েই আমাদের সারা বছরের সংসার চলত। এখন কিভাবে চলবে আমাদের এ সংসার তা নিয়ে চিন্তিত। ছেলে-মেয়েগুলোর পড়ালেখার খরচ কিভাবে চালাব। এ নিয়ে যেন চিন্তার কোন শেষ নেই।

    শাহপুর এলাকায় গেলে কথা হয় শফিকুর রহমান নামের এক কৃষকের সাথে তিনি বলেন, আমাদের ২৫বিঘা জমির সমস্ত ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যা থেকে ধান বিক্রি করে আমার সারা বছরের সংসার চলত। সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞস করলে তিনি বলেন- সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী তো এখন এখন পর্যন্ত পাইনি। এলাকার অন্য কেউ ত্রাণ পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তা আমার জানা নেই।

    ইফসুফ নগর এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন জানান, আমাদের ৫০বিঘা জমির সমস্ত বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অথচ আমরা এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোন ত্রাণ সামগ্রী পাইনি।

    কবির মিয়া নামের একজন জানান, সরকার থেকে যা কিছু চাল পেয়েছি। তা দিয়ে তো আর চলবে না। একই কথা বলেন মুরাদ কবির, ইসমাঈল মিয়া, আক্কাছ মিয়া, চান মিয়া সহ আরো অনেকে।

    এবিষয়ে কথা হয় জুড়ী উপজেলার ভারপাপ্ত নির্বাহী অফিসার বর্ণালী পালের সাথে, তিনি বলেন- বন্যার প্রথমে আমরা সরকার থেকে ১২টন চাল ও ৬২ হাজার টাকা পেয়ে তা কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেই। ত্রাণ সামগ্রী চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় আমরা আরো ত্রাণ চেয়ে পাঠিয়েছিলাম জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে।

    দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ২০টন চাল ও ১লক্ষ টাকার ত্রাণ আসে যা এখনো নিয়মিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ চলছে হাওর পারের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে। এমনকি হাওর পারের ৩০০ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের মধ্যে আগামী ৯৮ দিন ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ করা হবে।

    তিনি বলেন- আরো ২৯.৪০ মেট্রিক টন চাল আসবে। যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এখন পর্যন্ত যারা ত্রাণ সামগ্রী পায়নি তাদেরকে উপজেলায় এসে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।

    অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা হাকালুকি হাওর ও কইরকোনা বিল পানির নিছে তলিয়ে গিয়ে আবাদকৃত ৫৪৭০ হেক্টের জমির মধ্যে ৩২১৬ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে জানায় মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারন অফিস।