৩১০ লাশ ও জীবিত উদ্ধার ৩০০০ : ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কয়েকশ মানুষ

    0
    416

    ঢাকা, ২৬ এপ্রিল : সাভারে ধসে পরা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আজ এ পর্যন্ত ৩১০ জনের লাশ ও প্রায় ৩ হাজার লোককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদিকে আজ আরো ৭৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন শিল্প পুলিশ রয়েছেন। পক্ষান্তরে এ পর্যন্ত ২৮০টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা জানান, এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়ে আছে। অনেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন। কিন্তু ৯তলা ভবনটি ধসে একতলার সঙ্গে মিশে যাওয়ায় ভেতরে ঢোকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভেতরে থাকা লাশে পচন ধরেছে। দুর্গন্ধের কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

    ৩১০ লাশ ও জীবিত উদ্ধার ৩০০০ : ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কয়েকশ মানুষ
    ৩১০ লাশ ও জীবিত উদ্ধার ৩০০০ : ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কয়েকশ মানুষ

    ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ বলেন, তাদের ধারণা, ভবনটিতে প্রায় তিন হাজার লোক ছিলেন। আহত ও নিহত মিলে দুই হাজার ৬৭৪ লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। যতক্ষণ মনে হবে লোক জীবিত আছেন, ততক্ষণ উদ্ধার তৎপরতা চলবে।
    গত বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৯তলা ভবনটি রানা প্লাজা ধসে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বজনদের খোঁজে ওই ভবনের আশপাশে এবং সাভার অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মানুষের ঢল নামে। তাদের আহাজারিতে সাভারের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
    উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তিরা ধসে পড়া ভবনের পঞ্চম তলায় ছিলেন। চতুর্থ তলায় কিছু লোক বেঁচে আছেন বলে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মৃতদেহগুলো উদ্ধার করতে হলে রড কেটে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হবে। সে ক্ষেত্রে এটি ভেঙে পড়লে নিচের মানুষগুলোকে উদ্ধার করা যাবে না। এ জন্য মৃতদেহগুলো সেভাবেই রেখে দেয়া হয়েছে।
    উদ্ধারকাজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। এসব তলার ধ্বংসস্তূপের কিছু কিছু স্থানে দেড়-দুই ফুট করে ফাঁকা আছে। সেখান থেকে উদ্ধার চলছে। চতুর্থ তলার নিচে বাকি তলাগুলো একসঙ্গে মিশে গেছে। এ জন্য সেখানে পৌঁছা কঠিন হয়ে গেছে।
    সরেজমিন দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে একটু পরপরই টর্চ, রড কাটার যন্ত্র, অক্সিজেন, ছুরি কাঁচিসহ যখন যা দরকার চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সকাল থেকে অক্সিজেনের অভাব দেখা গেছে। একজন আরেকজনের ওপর দায়িত্ব দিয়ে খালি হাঁক দিতে থাকেন ওমুকটা লাগবে, তমুকটা দাও ইত্যাদি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দরকারি জিনিসটি সময়মতো মিলছে না।
    অপরদিকে উদ্ধার তৎপরতায় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসক দল অংশ নিয়েছে। তবে স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবকদেরও একটা বড় একটি অংশ ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে।

    সাভারে গার্মেন্টস ভবন ধস সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন : মেনন

     

    হতাহতদের সহায়তায় পার্টির তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে মেনন
    সাভারে গার্মেন্টস ভবন ধস সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
    দুর্ভাগ্যজনক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন

     

    সাভারে গার্মেন্টস ভবন ধস সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন : মেনন

    সাভার বিল্ডং ধসে নিহত আহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সহায়তার জন্য জরুরি তহবিল সংগ্রহের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃত্বসহ পার্টির সদস্য শুভান্যধ্যায়ীরা জরুরি তহবিলে অর্থ প্রদান করেন। ইতোমধ্যেই ১,৩১,৭০৩ (এক লক্ষ একত্রিশ হাজার সাত শত তিন টাকা) সংগৃহীত হয়েছে। এই জরুরি তহবিল সংগ্রহ সপ্তাহব্যাপী চলবে। আজ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৪টায় পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঐ তহবিল গ্রহণ করেন পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করতে গিয়ে রাশেদ খান মেনন সাভার ট্রাজেডিকে নির্মম হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে বলেন, ঐ বিল্ডিং ধসে পড়ার ঝুঁকির বিষয়ে পূর্বে জানা থাকার পরও জোর করে শ্রমিকদের যোগদান করতে বাধ্য করার কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য দায়ি বিল্ডিং ও গার্মেন্টস মালিকদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, এর আগে তাজরিন, স্মার্ট গার্মেন্টসসহ এধরনের দুর্ঘটনাজনিত গার্মেন্টস-এর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই বলেই এ ধরনের মালিকরা শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে নির্বিকার থাকতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেবার পরেও সাভার বিল্ডিং ধসের কারণ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তাল-লয় হীন বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন উল্লেখ করে মেনন বলেন, তার ঐ বক্তব্য দোষী মালিকদের আড়াল করার শামিল। এর ফলে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কেই অনাস্থা তৈরী হবে। তিনি এ ধরনের অসংলগ্ন কথা পরিহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাকে জোরদার করার আহ্বানসহ নিহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। সাভারের ঘটনায় উদ্ধারকাজের প্রশংসা করে মেনন বলেন সেনাবাহিনী ও অন্যান্য উদ্ধারকারী সংস্থাসমূহের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে সাধারণ মানুষের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণ এক অনন্য উদাহরণ তৈরী করেছে যা জাতিকে আরও সাহসী করেছে। রাশেদ খান মেনন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পার্টি কর্মীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকল গার্মেন্টস ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করারও দাবি জানান। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জরুরি সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প রক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। সাভার বিপর্যয়ে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
    পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তহবিল গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নুরুল হাসান, নুর আহমদ বকুল, মাহমুদুল হাসান মানিক, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক এমরান, মোজাম্মেল হক তারা, সালেহা সুলতানা, রাগীব আহসান মুন্না, আব্দুল খালেক, ঢাকা মহানগর কমিটির সম্পাদক কিশোর রায় প্রমুখ।