৩০লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    260

    আমারসিলেট24ডটকম,২১নভেম্বরঃ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবে। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে- আমরা কঠোর আত্মত্যাগ এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০১৩ উপলক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠগণের উত্তরাধিকারী ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণও এসময় উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মাদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
    বাংলাদেশকে একটি বিজয়ী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করায় এ জাতি মাথা নত করতে জানে না। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত, সমৃদ্ধ, মর্যাদাসম্পন্ন ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে করে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে পারি।
    মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে নেয়া বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দারিদ্র্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যতদিন আমি বেঁচে আছি, ক্ষমতায় বা বিরোধী দলে থাকি, আমি কথা দিচ্ছি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও বাসস্থানের জন্য আমার পক্ষে সম্ভব সব কিছুই করবো।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘আমি কষ্ট পাই যখন দেখি মুক্তিযোদ্ধারা অভাবে কষ্ট পাচ্ছে এবং এমন কাজে নিয়েজিত রয়েছেন যা আমদের জন্য মোটেই সম্মানজনক নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে। তিনি বলেন, তাদের (শহীদ) মর্যাদা ও সম্মান সব সময়ই সবার উপরে থাকবে।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘উদ্ধার পরিকল্পনা-২০১০’ নামে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যমে ২০১৪ সাল নাগাদ অতীতের সকল জটিলতা ও দায়মুক্ত হয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট কমপক্ষে ১৩৫ কোটি টাকার মূলধন আহরণ করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আর কোন ব্যাংক ঋণ নেই। সরকার নারায়ণগঞ্জে এক বিঘার বেশী জমি অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে উদ্ধার করে কল্যাণ ট্রাস্টকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও ১৩০ কোটি টাকা মূলের সাড়ে ৮ একর ভূমির দালিলিক জটিলতা দূর করে নিষ্কন্টক করা হয়েছে।
    মাহজোট নেতা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগ কোটা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা ২ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের মাসিক ভাতা ১১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং আড়াই হাজার শহীদ পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করে ৭ হাজার ২০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে সর্বমোট ৭ হাজার ৮৩৮ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ৬১ কোটি সাড়ে সাত লক্ষ টাকা রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
    আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে কয়েকজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে উপহার হিসেবে চেক, মোবাইল সেট ও শাল বিতরণ করেন। পরে তিনি কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের নবনির্মিত ভবন এবং ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেটের পূর্বদিকে স্বাধীনতা টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ।