“হাওরের জলাবদ্ধতা” ও করণীয়

0
50

আমার সিলেট রিপোর্টঃ হালআমল অর্থাৎ বিগত দুসপ্তাহ যাবত ভারি বর্ষন হয়েছে বড় হাওর এলাকায়। গত দুদিন আগে নিকলি, মিটামইন ও অষ্টগ্রামের হাওর এলাকায় দেশের ২য় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যার পরিমাণ ২১ মিলিমিটার। অনেকেই বিল মাকসা নদী শুকিয়ে যাওয়ার সময় থেকে আমাকে অনুরোধ করে আসছেন হাওরের এই সমস্যা নিয়ে লিখতে। নানা কারণে সময় হয়ে উঠেনি।
আমি একজন কৃষকের সন্তান। আমার বাপদাদারাও কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা। আর জন্মের পর ৭/৮ বছর বয়স থেকে হেটে বড় হাওরে যেতাম। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গরু- মহিষের গাড়িতে উঠে যেতাম আসতাম। আমার মতো এমন অভিজ্ঞতা হাওরে জন্ম গ্রহনকারী অধিকাংশ শিশু কিশোর যুবক, প্রৌঢ় ও বৃদ্ধের আছে। আজ মহামান্য রাষ্ট্রপতির অবদানে সাব মার্জিবল রাস্তার কারণে গাড়ি ঘোড়া অটোরিকশা যোগে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলা পর্যন্ত যাওয়া যায় শুকনার সিজনে।
আমার জানামতে বর্তমানে অর্থাৎ বিগত দুই দশকে হাওরের জলাধার হিসেবে খ্যাত বিল বল্লী, জোয়ায়রা, উড়া, বেড়া, লোদা বিল, ধোপাবিল, কাটা গাং, বিলমাকসা নদী, জলডুবসহ অনেক বিল-ঝিল, নদী নালা উজান থেকে আসা পলি পড়ে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। আর এজন্যই এখন সামান্য বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা এই জলাধার গুলির নেই। এর ফলে একটু ভারী বর্ষন হলেই পানি ধানের জমিতে উঠে ফসলী জমি তলিয়ে ফেলে। আমরা যখন ছোট তখন এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও সহজে জমি তলিয়ে যেতো না যদি না আসাম মেঘলায় তথা চেরাপুঞ্জি থেকে অতিবৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ নেত্রকোনার একাংশ দিয়ে বড় হাওরে এসে না পড়তো। আজ পলি পড়ে পড়ে জের জমি গুলিও ভরাট হয়ে গেছে।
এটি একটি প্রাকৃতিক বিষয় এবং তা শুধু বড় হাওরে নয়, সিলেট সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ নেত্রকোনা মৌলভীবাজারের সকল হাওর ও নিচু জমিকে উচু করে ফেলেছে। এটা শুধু ইটনা- মিটামইন- অষ্টগ্রামের একক সমস্যা নয়। পুরো হাওরাঞ্চলের সমস্যা এবং এর সাথে বৈষ্ণিক উষ্ণতারও একটা যোগসূত্র রয়েছে। আমরা যদি পৃথিবীর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারব আমেরিকা কানাডার তথা ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত আবহাওয়া নানা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে যা মানবসভ্যতার জন্য হুমকির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
এখন আসুন দেখি অতিবৃষ্টি জনিত জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির উপায় আছে কি না? কমবেশি অবশ্যই আছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর, মৎস অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডে যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে হবে, জনপদের নেতৃবৃন্দ ও কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী যুগোপযোগী প্রস্তাব তৈরি করে কাজ শুরু করতে হবে।

ভুলে গেলে হবে না যে হাওরাঞ্চলের ধান ও মাছ জাতীয় সম্পদ। পৃথিবীর মিঠাপানির সবচেয়ে সনের মাছ হলো এই হাওরের মাছ যা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আমি বরিশাল চাকরি করেছি এবং বরিশাল মাছের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ঐ এলাকার মাছ আর হাওর এলাকার মিঠাপানির মাছের স্বাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির সহজ উপায়ঃ
১. হাওর এলাকার সকল বিল গুলি পর্যায়ক্রমে ড্রেজিং করে গভীরতা বৃদ্ধি করা।
২. বন্ধ হয়ে যাওয়া বা দখল হয়ে যাওয়া খালবিল গুলি সরকারি ভাবে পুনরুদ্ধার করা।
৩. কাটা গাং খনন প্রকল্প পুনরায় হাতে নেয়া
৪. বিল মাকসা নদীসহ ভরাট হয়ে যাওয়া নদী সমূহ খনন করা
৫. গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালবিল বন্ধ না করা এবং এগুলো খনন করা।
৬. সকলই নিজেদের জমিতে কিছু পুকুর বা গাঁতা দেয়া। যা আগেকার দিনে ছিল এবং হাওরের মানুষ বা বাথানের জিরাতিরা এই গাঁতার পানিই পান করত। গরু মহিষও এসব পানি পান করত।
৭. হাওরের মানুষ এখন উঠান পর্যন্ত ধান চাষ করে যা বিপজ্জনক। বিকল্প ও বহুমুখী ফসলের চাষাবাদ করা দরকার যেন ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকল্প ফসলের আয় দিয়ে বেঁচে থাকা যায়।
৮. কৃষকদের মানসিকতার পরিবর্তন করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৯. দোষারোপ করার মানসিকতা পরিবর্তন করে কাজের মানসিকতা সৃষ্টি করা।

এক কথায় জলাধার গুলি খনন করে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সহজে পানি পাস হওয়ার জন খালবিল ও নদী গুলো তাতে সংযুক্ত করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিজ্ঞানসম্মত ধারণা থেকে মনে করি।
এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লেখালেখি করেছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
লেখকঃ তৌহিদুল ইসলাম শরিফ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here