স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন:খালেদা ফিরলেন বাসায়

    2
    252

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫এপ্রিল: জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।

    ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার রোববার এ জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন শুনানিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আদালতকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদারতে হাজির হতে পারেননি। আজ (রবিবার) তিনি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে আদালতে জামিন আবেদন করেছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন মঞ্জুর কারতে আদালতকে অনুরোধ করছি।’

    অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন সম্মানী ব্যক্তি। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।’ শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক আবু আহমেদ জামাদার। একইসঙ্গে মামলা দুটির শুনানি আগামী ৫ মে পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত। এরপর আদালত থেকে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে না গিয়ে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফিরে যান। এর মাধ্যমে গুলশানেরই ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে টানা ৩ মাস অবস্থানেরও অবসান ঘটান বিএনপি প্রধান। গত ৩ জানুয়ারি থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন তিনি।

    এর আগে সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হলে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন।

    খালেদার আগমনকে কেন্দ্র করে বকশীবাজারে আদালতের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক প্রহরায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

    এ দুই মামলায় সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এ পর্যন্ত ৬৩ কার্যদিবসে সাতবার হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসার অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দেন তিনবার।

    গত বছরের ২৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই শুরু হয়েছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ।

    এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দুটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারছেন না জানিয়ে আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। পাশাপাশি সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করারও আবেদন জানান তাঁরা। কিন্তু সময় আবেদন নামঞ্জুর ও আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে দুই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে আদালত সেটিও নামঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখেন।

    এর কয়েক দিন পর গত ৩ মার্চ দুর্নীতির দুটি মামলায় আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নিতে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই দিন তাঁর পক্ষে তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে আবেদনটি জমা দেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

    জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

    অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।