স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির লোমহর্ষক বিবরণ ঐশীর : ঠাণ্ডা মাথায় খুন

    0
    274

    আমার সিলেট ডেস্ক,২৬ আগস্ট  : আদালতে  পুলিশ দম্পতি খুনের দায় স্বীকার করে মেয়ে ঐশী রহমান পুলিশের কাছে এ জবানবন্দি দিয়েছে। এতে সে তার বাবা-মাকে ঠাণ্ডা মাথায় করা খুনের পরিকল্পনা ও ওই রাতের প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। আদালতে রেকর্ড করা তার ৩০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে খুনের ঘটনার আদ্যোপান্ত থেকে এর চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো-
    ঐশী জানায়, ঘটনার চারদিন আগে বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পুরো বিষয়টি বন্ধু জনির সঙ্গে আলোচনা করি। সে-ও উৎসাহিত করে। আগে থেকেই দুই বোতল মদ বাসায় এনে ওয়ারড্রোবের ভেতরে লুকিয়ে রাখি। মদের বোতল দুটি বন্ধুই দিয়েছিল। ওই দিন রাত ২টার দিকে দু’হাতে ধারালো চাকু নিয়ে মায়ের রুমে ঢুকি। তখন আম্মু কাত হয়ে ঘুমাচ্ছিল। আম্মুর পাঁজরের নিচে পেটের পাশে চাকু দিয়ে স্ট্যাব করলে আম্মুর ঘুম ভেঙে যায়। তখনই ছোট ভাই ঐহীও জেগে ওঠে। ঐহী চিৎকার শুরু করে। তখন ঐহীকে বাথরুমে নিয়ে আটকে রাখি। আম্মুর পাশে এসে বসি।
    জবানবন্দিতে ঐশী বলেছে, আম্মু বলে, আমি তোর মা..না? আম্মু পানি খেতে চায়। আমি আম্মুর রুমে থাকা জমজমের পানি খেতে দিই। এরপরই আম্মুকে আরও কয়েকবার স্ট্যাব করি। তবে স্পষ্ট মনে নাই। আম্মুর কষ্ট হচ্ছিল দেখে শেষে গলার মধ্যে স্ট্যাব করি। তখন আম্মু মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে বিছানা থেকে ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিল। পক্ষন্তরে ঐশী তার বাবাকে হত্যার বিষয়ে জানায়, আম্মুর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আব্বুর রুমে গিয়ে আব্বুর গলার মধ্যে স্ট্যাব করি। কিছুক্ষণ পর বাবা মারা যায়।
    সুমি তখন গেস্টরুমে ঘুমাচ্ছিল। দরজা বন্ধ ছিল। আমি সুমিকে ডেকে তুলি এবং বলি, আব্বু-আম্মুকে মেরে ফেলেছে। সুমি জানতে চেয়েছিল কে মেরে ফেলেছে। আমি কিছু বলি নাই। সুমিকে সাথে নিয়ে আব্বু ও আম্মুর লাশ আমার রুমের (আব্বু যে রুমে ঘুমাচ্ছিলেন) বাথরুমে রেখে দিই। আম্মুর রুমের রক্তমাখা বেডশিট আমার রুমে নিয়ে রাখে সুমি। এরপর সুমি আম্মুর রুম পরিষ্কার করে। আমি গোসল করি এবং আমার পোশাক চেঞ্জ করি। আমার রুম লক করে রাখি যাতে ঐহী কিছু বুঝতে না পারে। এরপর ঐহীকে বাথরুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।
    জবানবন্দিতে ঐশী জানায়, এরপর ঐহীকে বলি- আম্মুর একটু ইনজুরড হয়েছে, আব্বু হাসপাতালে নিয়ে গেছে আম্মুকে। ঐহীকে বলি, আমরা অন্য জায়গায় চলে যাবো। আব্বু এসে আমাদের নিয়ে যাবে। আম্মুর লাশ বাথরুমে ঢোকানোর আগে আংটি ও চুড়ি খুলে রাখি। ঘটনার পর জনিকে ফোন করি। সে ফোন ধরেনি। এরপর জনির মাধ্যমে পরিচিত এক আঙ্কেল রকির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং আশ্রয় চাই। তখন রকি আঙ্কেল রনি নামে একজনকে বাসা ঠিক করে দিতে বলেন।
    জবানবন্দির একটি অংশে ঐশী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার পর আশ্রয়ের জন্য সিএনজি নিয়ে সারাদিন ঘুরি। দিনের বিভিন্ন সময় রকি ও জনির সঙ্গে দেখাও হয়। আর রনির সঙ্গে ফোনে কথা হয়। রাতে থাকার জায়গা না পেয়ে সুমিকে এক সিএনজি চালকের বাসায় রাখি। আরেক সিএনজি চালক আমাকে ও ঐহীকে তার মালিকের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তার মালিক সম্ভবত ব্যাংকে চাকরি করেন। ওই রাতে সুবর্ণা খালার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সুবর্ণা খালাই রবিউল মামার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার সঙ্গে রবিউল মামার কথাও হয়। তাই ঐহীকে রিকশায় উঠিয়ে দিই মামার বাসায় যাওয়ার জন্য।
    ঐশী তার জবানিতে বলে, পরদিন শুক্রবার রাতে ছিলাম রনির খালার বাসায়, তার নাম কুলসুম। বাসা বাসাবোতে। রাতে আমার অনুশোচনা হতে থাকে। আমি সিদ্ধান্ত নিই সব ঘটনা প্রকাশ করে দেবো। শনিবার সকালে উত্তরায় সুবর্ণা খালার বাসায় যাই। খালাকে না পেয়ে পল্টন থানায় চলে আসি। জনি ও রকির পরিচয়ের ব্যাপারে ঐশী জানায়, জনি আমার বন্ধু, তার বয়স ২৫-২৬ হবে। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ, থাকে ঢাকায়। আফতাব নগরে স্টেপ আপ নামে তার একটি নাচের স্কুল ছিল।
    ঐশী জানায়, পরে জানতে পারি জনির বাড়ি রূপগঞ্জে। জনির সঙ্গে ইয়াবা সেবন করতাম, সেই ইয়াবা সাপ্লাই দিতো। আর রকির সঙ্গে পরিচয় হয় জনির মাধ্যমেই। বাড্ডা এলাকার ৮ নম্বর রোডে রকির অফিস আছে। রকি রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায়ী। বয়স অনুমান ৪০ বছর।
    আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ঐশী বলে, বিগত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার আমি ওষুধের দোকান থেকে তিন পাতা টেনিল ও তিন পাতা নাইট্যাচ (মোট ৬০টি) ট্যাবলেট কিনে এনে রাখি। পরদিন শুক্রবার বাসায় আব্বু-আম্মুর জন্য কফি তৈরি করি। সব ওষুধই গুঁড়ো করে কফির সঙ্গে মিশিয়ে দিই। মাগরিবের নামাজের পর আম্মুকে কফি খেতে দিই। আম্মু কফি খেয়ে ঘুমিয়ে যান। রাত ১১টার পর অবশিষ্ট কফি গরম করে আব্বুকে খেতে দিই। আব্বুও কফি পান করে ঘুমিয়ে যান। এরপর রাত ১টায় হুইস্কি খেতে শুরু করি। এটা শেষ করে রাত ২টার দিকে আমি এ হত্যা মিশন শুরু করি।