সাভারের ভবন ধ্বসে নিহত-আহতদের স্মরণে ওয়ার্কার্স পার্টির শোকর্যালি অনুষ্ঠিত।
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি সাভার ট্রাজেডিকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও কিছু বাম দলের ২ মে’র হরতাল আহ্বানকে রাজনৈতিক অর্বাচীনতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২৮ এপ্রিল বিকেলে সাভারের ভবন ধ্বসে নিহত-আহতদের স্মরণে ওয়ার্কার্স পার্টির শোকর্যালি পূর্ববর্তী সমাবেশে রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, বিএনপি-জামাতসহ ১৮ দলের নৈরাজ্যিক রাজনীতির সাথে এটা সংগতিপূর্ণ, কিন্তু কিছু বাম দলের একই দিনে হরতাল আহ্বান স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। এই বামরা রাজনৈতিক কিছু সুবিধা আদায় করতে ‘ঘরপোড়ার মধ্যে আলু পোড়া’ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ঐ পোড়া আলুতে তাদের মুখই পুড়বে। বিএনপি-জামাতের অপরাজনীতিই লাভবান হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটি আয়োজিত এই শোক সমাবেশে কমরেড মেনন বলেন, সাভার ভবন ধ্বসে আটক নিহত-আহতদের উদ্ধারকার্য নিঃসন্দেহে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনী ও অন্যান্য উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি উদ্ধারকার্যে সাধারণ মানুষের সাহসী অংশগ্রহণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে মুক্তহস্তে সহায়তা এদেশের মানুষের মানবিক গুণাবলিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য এই প্রবচনকেই আরেকবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সমাবেশে রাশেদ খান মেনন সাভার ভবন ধ্বসের ঘটনার জন্য দায়ী ভবন মালিক ও পোশাক শিল্প মালিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।
পার্টির ঢাকা মহানগর সম্পাদক কিশোর রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল, মাহমুদুল হাসান মানিক, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালেহা সুলতানা, এনামুল হক এমরান, ঢাকা মহানগর নেতা আবুল হোসাইন প্রমুখ।
এর আগে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি শোকর্যালি বের হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
২৯ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বাম-প্রগতিশীল ১০টি রাজনৈতিক দল
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল : সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে শত-শত গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে, শিল্পখাতে এ ধরনের শ্রমিক মৃত্যুর মিছিল রোধ, নিহত প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, সকল আহত শ্রমিককদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আগামীকাল ২৯ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বাম-প্রগতিশীল ১০টি রাজনৈতিক দল।
সাভারের ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলে বরং মুনাফালোভী মালিকদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বলেই উল্লেখ করা যুক্তিযুক্ত। কারণ সাভারের রানা প্লাজা নামক যে ভবনটি ধ্বসে পড়েছে, তা ছিল মূলত মৃত্যুকূপ। আর সে মৃত্যুকূপে জোর করেই ঠেলে দেওয়া হয় এতো বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে। এই শ্রমিকদের রক্ত জল করা পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করেই মালিকদের মুনাফার পাহাড় গড়ে ওঠে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনের প্রতি এই খুনীদের বিন্দুমাত্র দায়বোধ, বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা নেই। আবার রাষ্ট্রও এই খুনীদের পোষে পরম মমতায়, আদরে-সোহাগে। তাই এতো বিপুল প্রাণহানিতেও রাষ্ট্রের টনক নড়ে না। বারেবারে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, নামমাত্র ক্ষতিপূরণে রাষ্ট্র কিনে নেয় অসহায় জীবনগুলোকে। তারপর আবার পুরনো নিয়মে ফিরে যাওয়া, একটা সময় পর এসে আবারো মুনাফার স্বার্থের বলি হয় অসহায় গতর খাটানো গরিব প্রাণগুলো। এভাবেই হত্যাকাণ্ডের চক্র ঘুরে চলে রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরে। আর ফুলে ফেঁপে পেট মোটা হয় মুনাফাখোর মালিকগুলোর।
আগের দিনই রানা প্লাজায় ফাটল দেখা দেখা দেয়, ভবনটি হয়ে ওঠে পরিত্যক্ত। ঘটনার দিন সকালে শ্রমিকরা আসে কাজে, কিন্তু তারা জীবনকে এভাবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায় নি। মালিকদের জোরের মুখেই তারা কাজে যেতে বাধ্য হয় ঐ মৃত্যুপুরীতে। তাহলে এটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কি হতে পারে? তার উপর ঐ ভবনটির অনুমোদন ছিল পাঁচ তলা। বানানো হয়েছে নয় তলা। লোভের অট্টালিকা গড়ে তোলার আগে ঐ স্থানের ডোবা পুকুর যথাযথভাবে ভরাটও করা হয় নি। রাবিশ ময়লা ফেলে কোনোরকমে ডোবা ভরে ঐ পাপের অট্টালিকা গড়ে তোলা হয়। ধরিত্রী এ পাপ আর সইতে পারে নি। কিন্তু এ পাপ যারা করল, তাদের মুনাফার ভাণ্ডার তো এতটুকু খালি হবে না। খালি হয়ে গেল অসহায় কত মায়ের বুক। হায় রে পুঁজি! এই হলো তার আসল চরিত্র। ভবন ও গার্মেন্টস মালিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু কতদিন তাদের আটকে রাখা যাবে? সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী বাহাদুররা যখন এ প্রাণহানি নিয়ে উপহাসের কথার ডালি সাজান, তখন বিশ্বাস রাখতে তো কষ্টই হয়। বিশেষ করে ঐ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ যে কতটা শক্তিশালী পুঁজি সিন্ডিকেট, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগেও টাকার জোরে, ক্ষমতার জোরে তারা পরাভূত করেছে জনগণকে, নৈতিকতাকে। তাদের পাপের প্রতীক বিজিএমইএ ভবনটি তাই মহামান্য আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হাতিরঝিলের বুকে দাঁড়িয়ে সদম্ভে তার ক্ষমতার ঘোষণা দিয়ে চলে, রাষ্ট্র-জনগণ অসহায় হয়ে তা তাকিয়ে দেখে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কাণ্ডজ্ঞানহীন: মেনন
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল :বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেবার পরেও সাভার বিল্ডিং ধসের কারণ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয় কাণ্ডজ্ঞানহীনও। তার ওই বক্তব্য দোষী মালিকদের আড়াল করার শামিল। এর ফলে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কেই অনাস্থা সৃষ্টি করবে।
শুক্রবার পার্টির অফিসে সাভারে বিল্ডিং ধসে নিহত আহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সহায়তার জন্য জরুরি তহবিল সংগ্রহকালে মেনন এ কথা বলেন। এ তহবিলে ইতিমধ্যেই এক লাখ ৩১ হাজার ৭০৩ টাকা সংগৃহীত হয়েছে। এই জরুরি তহবিল সংগ্রহ সপ্তাহব্যাপী চলবে।
মেনন বলেন, ওই বিল্ডিং ধসে পড়ার ঝুঁকির বিষয়ে পূর্বে জানা থাকার পরও জোর করে শ্রমিকদের যোগদান করতে বাধ্য করার কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য দায়ী বিল্ডিং ও গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মেনন আরো বলেন, এর আগে তাজরীন, স্মার্ট গার্মেন্টসসহ এ ধরনের দুর্ঘটনাজনিত গার্মেন্টসের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই এ ধরনের মালিকরা শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে নির্বিকার থাকতে পারছে।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তহবিল গ্রহণ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নুরুল হাসান, নুর আহমদ বকুল, মাহমুদুল হাসান মানিক, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক এমরান, মোজাম্মেল হক তারা, সালেহা সুলতানা, রাগীব আহসান মুন্না, আব্দুল খালেক, ঢাকা মহানগর কমিটির সম্পাদক কিশোর রায় প্রমুখ।
রাশেদ খান মেনন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পার্টি কর্মীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান।