সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি কমছে তবে পানিবাহিত রোগের শঙ্কা বাড়ছেঃনতুন এলাকা ঝুঁকিতে

0
394
সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি কমছে তবে পানিবাহিত রোগের শঙ্কা বাড়ছেঃনতুন এলাকা ঝুঁকিতে
সিলেট-সুনামগঞ্জে পানি কমছে তবে পানিবাহিত রোগের শঙ্কা বাড়ছেঃনতুন এলাকা ঝুঁকিতে

সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমতে থাকায় এ অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো নিচু এলাকার সড়কগুলোতে পানি রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যার পানি নামায় অনেকে বাড়ি ফিরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত আর ময়লা আবর্জনা সাফ করার কাজে ব্যাস্ত। তবে এখনো রয়েছে নিরাপদ পানি ও খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা।

সোমবার ২৩ মে সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় সাংবাদিকগণ জানিয়েছেন,  নগরের তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর এখনো পানির নিচে। বাসিন্দাদের ঘরের সামনে এখনো হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এ পানি কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের শঙ্কায় আছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকায়, পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। এর কারণ বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর সে রোগগুলোর ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। সে জন্য মেডিকেল দল তৎপর।

এর আগে গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সিলেটে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে কিছুটা সময় লাগবে।      

ওদিকে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত আছে। তবে নতুন করে জেলার নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত জগন্নাথপুরসহ তিনটি উপজেলায় পানি বাড়ছে। এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় ১৪ মে থেকে বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে বেশি আক্রান্ত হয়। ছাতক উপজেলার উত্তরের ইউনিয়নগুলোতে পানি কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে দক্ষিণের জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ, সৈয়দেরগাঁও, সিংচাপইড় ইউনিয়নে। আজ সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক ধরে ছাতকে যাওয়ার পথে এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত অবস্থায় দেখা গেছে। বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়েছিল ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের। তবে সেটি এখন স্বাভাবিক হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টি না হবার কারণে উজান থেকে  পাহাড়ি ঢল কম নেমেছে । এতে সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে জেলায় উজানের পানি নামায় নিচু এলাকা জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বাড়ছে। আজ (সোমবার) সকাল নয়টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে। গত দুই দিনে সুরমা নদীর পানি কমেছে ৩২ সেন্টিমিটার। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ও প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় জেলার প্রায় ৩০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি আছে। শহরের কালীপুর, হাসনবসত, ওয়েজখালী, পাঠানবাড়ি এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি বেশি। এ ছাড়া বড়পাড়া, মল্লিকপুর, শান্তিবাগ, পশ্চিম নতুনপাড়া, পশ্চিম হাজীপাড়া, হাসননগর, সুলতানপুর এলাকায় এখনো বন্যার পানি আছে। হাসননগর ও সুলতানপুর এলাকার ৬৬টি পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সহায়তায় ১৭৫ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা ও ৪ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২০টি। এতে প্রায় ৩০০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

ওদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আর টানা বর্ষণে নেত্রকোনার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায়  জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন, কেন্দুয়া, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েক শ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। রোববার সন্ধ্যায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।