আমারসিলেট24ডটকম,০৭জানুয়ারীঃ এনএইচকে ওয়ার্ল্ড রেডিও জাপান কর্তৃক আয়োজিত ÔWe Love Japanese Songs – 2014’ প্রতিয়োগিতায় শ্রোতা-দর্শক ভোটে সেরা পুরস্কার জিতে নিয়েছে সুনামগঞ্জের মেয়ে শাইরা হোসেন ম। জাপানি গান গেয়ে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছে সৃজন বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ৯ বছরের “ম”।
গতবছর তৃতীয়বারের মতো অর্থাৎ ২০১৩ সালের নভেম্ব^রে এনএইচকে ওয়ার্ল্ড রেডিও জাপান তৃতীয়বারের মতো ÔWe Love Japanese Songs – 2014’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জাপানি নয়, এমন ব্যক্তিদের জাপানি গান গাওয়ার এ প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যাপী খুবই সমাদৃত হয়। রেডিও জাপানের বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ শ্রোতা-দর্শকদের মধ্যে তা ব্যাপক আলোড়ন তুলে। ফলে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্যে বিশ্বের ৪৭টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ৩৩৮টি গান জমা পড়ে। সবচেয়ে বেশি গান জমা পড়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাংলাদেশ থেকেও জমা পড়ে ৬টি গান। ম’র ছোট ভাই শাদমান হোসেন অয়নও এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল।
সে এ প্রতিযোগিতায় জাপানি শিশুদের বিখ্যাত গান ‘সাকুরা সাকুরা’ পাঠিয়েছিল। সাধারণত অক্টোবর মাসে ÔWe Love Japanese Songs’প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে বিদেশিদের কাছ থেকে জাপানি গান আহ্বান করা হয়। নভেম্বরে গানের ভিডিও পাঠাতে হয়। প্রাপ্ত গানগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ের পর এনএইচকে ওয়ার্ল্ড রেডিও জাপানের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। এরপর চলে ভোটের পালা। ডিসেম্বরের প্রথম দু’ সপ্তাহ ধরে ভোট দেয়া যায়। আগ্রহী শ্রোতা-দর্শকগন ওযেবসাইট থেকে গানগুলো শুনতে পারেন, পছন্দের গানকে ভোট দিতে পারেন। এরপর নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এসব গান থেকে সেরা গানগুলো নিয়ে এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জাপান টিভি একটি অনুষ্ঠান প্রচার করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠানো সেরা গানগুলোর ৭/৮টি গান এ অনুষ্ঠানে প্রচারের সুযোগ পায়। জাপানের জাতীয় টেলিভিশন থেকে গান প্রচারের এ বিরল সুযোগ যাদের হয় তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান।
এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জাপান টিভির উক্ত অনুষ্ঠানেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এবার জানুয়ারির ৩ তারিখে ÔWe Love Japanese Songs – 2014’ অনুষ্ঠানটি জাপানের টিভিতে প্রচার করা হয়। কিন্তু জাপানের টিভি অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে দেখার সুযোগ না থাকায় ফলাফল জানা যায় ৫ তারিখে। শ্রোতা-দর্শক ভোটে এবারও শাইরা হোসেন ম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জিতেছে। সারা বিশ্বের অসংখ্য শ্রোতা-দর্শক শুনেন ৩৩৮টি গান এবং ভোট দেন তাদের ভাল লাগার শিল্পীকে। ভোট শেষে শ্রোতাদের ভোটে সেরা গান নির্বাচিত হয় বাংলাদেশের মেয়ে শাইরা হোসেন “ম”র গাওয়া “ইপ্পোন নো এম্পিৎসু” গানটি। হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমার ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা দেখে জাপানের বিখ্যাত গায়িকা হিবারি মিসোরা যুদ্ধ নয় শান্তি চাই বার্তা ছড়িয়ে দিতে এ গানটি গেয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্য এ সম্মান বয়ে আনায় রেডিও জাপানের বাংলা বিভাগসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ম’র এ সাফল্যের পিছনে বড় অবদান রেখেছেন “ম”র গানের শিক্ষক শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া “ম”র পক্ষে এ সাফল্যের সিড়ি টপকানো সম্ভব ছিল না। এছাড়া “ম”র এ সাফল্যের পিছনে তার একজন প্রবাসী আংকেলের অবদানও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ।“ম”কে জাপানি গানের উচ্চারণ ও সুর পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন, পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে তাকে সাহস যুগিয়েছেন। “ম” তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে বলে জানায়।
উল্লেখ্য, শাইরা হোসেন “ম”র সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক মোঃ শাহাদত হোসেনের বড় মেয়ে। “ম”র মা শরিফা আক্তার পান্না একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার ও নিভৃতচারী লেখিকা। “ম” গান শেখার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা ও গল্পের বই পড়তে পছন্দ করে। সে সুনামগঞ্জের সৃজন বিদ্যাপীঠের একজন মেধাবী ছাত্রী। বিগত বার্ষিক পরীক্ষায় সে ৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। যারা ভোট দিয়ে “ম”কে বিজয়ী করেছেন, সে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। সে সকলের দোয়া প্রার্থী।