সিলেট বিভাগে বন্যায় মৃতের সংখ্যা এই পর্যন্ত প্রাপ্ত সংখ্যা-২২

0
320
সিলেট বিভাগে বন্যায় মৃতের এই পর্যন্ত প্রাপ্ত সংখ্যা-২২
সিলেট বিভাগে বন্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা।

জহিরুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার: দেশে দ্বিতীয় ধাপে স্মরণ কালের ভয়াবহ চলমান বন্যায় সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

অধিপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, “এ পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য আমরা পেয়েছি। মৃত্যুর সংখ্যা জেলা গুলো হলো-সিলেট সদর ১২ জন, মৌলভীবাজারে ৩ জন ও সুনামগঞ্জে ৫ জন।“

মঙ্গলবার সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরে মা-ছেলের মরদেহ ভেসে ওঠেছে। তাৎক্ষণিক এ দুই মরদেহের তথ্য তার কাছে নেই। তবে এ তথ্য যোগ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী, বন্যায় সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার পর্যন্ত সিলেটের জেলা প্রশাসক একজনের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ জনের ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করেনি প্রশাসন।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। সোমবার পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার ২১ জুন সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় পানিতে ভেসে আসে নাজমুন্নেসা ও তার ছেলে আব্দুর রহমানের মরদেহ। তারা দরবস্ত ইউনিয়নের কলাগ্রামের বাসিন্দা।

মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে জৈন্তাপুর উপজেলার ইউএনও আল বশিরুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবারে নাজমুন্নেসা তার ছেলেকে নিয়ে পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মেয়ের বাড়িতেও পানি ওঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে মা-ছেলে সড়কের পাশে পানিতে তলিয়ে যান তাদের মরদেহ ভেসে ওঠেছে বলে সুত্রে জানা গেছে।’

কানাইঘাটে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের ঠাকুরের ঘাটি এলাকার এক ব্যক্তি হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরদিন পানিতে তার লাশ পাওয়া যায়।“

শুক্রবার মরদেহ উদ্ধার হলেও এ তথ্য জানা গেছে সোমবার। তবে তার নাম জানাতে পারেননি ওসি।

এছাড়া কানাইঘাটে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর তথ্য অনেকেই প্রচার করছেন ফেইসবুকে। তবে এর সত্যতা এখনো নেই বলে জানিয়েছেন ওসি।

এর আগে সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “পানিতে পড়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন মারা গেছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো তথ্য আমি পাইনি।“

ডিসি জানান, “পানিতে ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে রোববার নগরের রায়নগরে নিজ বাসার সামনে মারা গেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী।“

সেদিনই স্থানীয় একটি শ্মশানে টিটুর মরদেহ সৎকার করা হয় বলে জানান সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি।

সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক সোমবার জানিয়েছেন, বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজন মারা যাওয়ার খবর তিনি জেনেছেন। এর মধ্যে একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও দুজন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া একজন এখনও নিখোঁজ আছেন।

তিনি জানান, এদিন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার নোয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় বন্যার পানির ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন মনির হোসেন নামে এক যুবক। গত শুক্রবার উপজেলার নলকট গ্রামের কলেজছাত্র আব্দুল হাদি পানিতে তলিয়ে যায়। ওইদিনই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় আরও একজন পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন।

তবে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে আরও দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে।

সেলিম বলেন, ‘আবুল কাশেম তার পরিবারের সঙ্গে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বেড়েছে জেনে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে আসেন। দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।

‘এ সময় তার ছোট চাচাতো বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি-নাতি দুজনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদি ছুরেতুন নেছার মরদেহ ভেসে ওঠে। আর রোববার সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। তাদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’

তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পানিতে তলিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে একে গুজব বলেছেন উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য পাইনি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’

বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতকের ইউএনও মামুনুর রশীদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার কানাখালী রোডের আখড়া এলাকায় পীযূষ ও জাউয়া বাজার এলাকায় হানিফা বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে পানিতে তলিয়ে। তবে এই দুই ঘটনা ইউএনও নিশ্চিত করেননি।

এছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশু মারা যাওয়ার খবরও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এটিও প্রশাসন নিশ্চিত করেনি।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা কানাইঘাট থেকে অসুস্থ অবস্থায় ৭ জনকে উদ্ধার করেছি। তার মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মৃত্যুর কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।“