সিতারার ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো কি বন্ধ হয়ে যাবে ?

    5
    888

    এস,এস,সিতে জি,পিএ-৫ প্রাপ্ত আদিবাসী তাঁতকন্যা সিতারার  কলেজে পড়া হচ্ছে না !

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬জুন,শাব্বির এলাহীঃ  তাঁতে কাপড় বুনে লেখাপড়ার খরছ চালিয়েছে আদিবাসী মেয়ে সিতারা বেগম। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রামের মণিপুরী মুসলিম (পাঙান) সম্প্রদায়ভুক্ত হতদরিদ্র  তাজুল ইসলাম  ও নাছিরা বেগমের চার সšতানের মধ্যে সবার ছোট সিতারা এ বছর এস,এস,সি পরীক্ষায় দয়াময় সিংহ উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ -৫ পেয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক বাবা দ’ুবেলা খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে তার অন্য সšতানদের লেখাপড়া চালিয়ে যখন হাঁিপয়ে উঠছেন তখন মেয়ের এরকম ভালো ফলাফলের খবর তাকে অকৃত্রিম আনন্দ যুগিয়েছে।

    এ খবরে এলাকায় আনন্দের ঢল নামলেও সিতারাদের পরিবারে মেধাবী মেয়ের ভবিষ্যত আর স্বপ্ন পূরন  নিয়ে আশংকার বাতাস বইছে।   প্রচন্ড অভাবের কারণে বড়ভাইয়ের মতো সিতারারও উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ এখন। নুন আনতে পাšতা পুরায় সংসারে তাঁতে কাজ করার পাশাপাশি অদম্য মনোবল আর কঠোর অধ্যাবসায়ে পিএসসি ও জেএসসিতেও বৃত্তি লাভ করেছিলো সিতারা। তার স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করে সে চিকিৎসক হবে। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে।কিন্তু তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।মেয়ের স্বপ্নপূরণে কলেজে পড়ার সাধ মেটাবেন কিভাবে সে চিন্তায় অস্থির  মা নাছিরা বেগম চোখের পানি ফেলে এ প্রতিবেদককে জানান, হতদরিদ্র সংসারের কষ্টের কাহিনী।

    একটুকরো ভিটে আর ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করার শক্তি  ছাড়া যাদের আর কিছুই নেই,তাদের আছে শুধু স্বপ্ন ,মানুষের মতো মানুষ হবার স্বপ্ন। সিতারা কান্নাজড়িত কন্ঠে তার এ পর্যšত এগিয়ে আসার গল্প শোনায়।  বৃত্তির টাকা না পেলে হয়তো এসএস,সিটাও পড়া হতো না তার।সে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে আর্তমানবতার সেবা করতে চায়।কিন্তু চরম দারিদ্রতা তার সে স্বপ্ন পূরণে কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।লেখাপড়ার ফাঁকে অন্যের বাড়ীতে তাঁতে কাপড় বুনে যে নিজের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ যুগিয়েছিলো সে সিতারার বাবা চান মেয়েকে কোন ভাল ঘরে পাত্রস্থ করতে অথবা যে কোন এন,জিওতে ছোটখাটো কোন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে। অথচ ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো সিতারা আশায় বুক বেঁধে কতো কষ্ট করে প্রতিদিন ৯/১০ঘন্টা করে লেখাপড়া করে এ ফলাফল অর্জন করেছে।

    সারা গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও নিজেদের বাড়ী অর্থ্যাৎ জরাজীর্ণ ছোট ঘরে বিদ্যুৎ নেই,তাই রাতে কেরোসিনের কুপির টিমটিমে আলোয় অথবা আশেপাশের বাড়ীর বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করেছে সে জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে। আজ শুধু চরম দারিদ্র্যের কঠোর কশাঘাতে ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্নবাণ সিতারার মানুষ হবার স্বপ্ন। বাবা তাজুল ইসলামের কথা, সংসারের ভরণপোষন চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আর পারছি না।

    কিন্তু মা তার ছোট সন্তান লেখাপড়া করুক,মানুষ হয়ে মানুষের সেবা করুক।একমাত্র ভাই জহুর হোসেন যে এইচ.এস.সি. পাশ কওে এখন চাকুরীর খোঁজ করছে ,সেও চায় তার বোন লেখাপড়া করে তার স্বপ্ন পূরণ করুক।। দুবেলা খেয়ে না খেয়ে তাঁতে কাজ করে প্রতিদিন ৯/১০ঘন্টা করে লেখাপড়া করে এ ফলাফল অর্জন করে সিতারা । ঘরের ছাগল বিক্রি করে ও কাপড় বুনার মজুরী মিলিয়ে ফরম ফিল-আপের টাকা যোগাড় করেছিলো সে।

    হতদরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের মেধাবী সন্তান সিতারারা প্রতিমুহুর্তে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকলেও মা বাবা আর  শুভানুধ্যায়ীদের প্রেরণায় এতোদুর লেখাপড়া চালাতে পিছপা হয়নি। কিন্তু অভাগা বাবা মায়ের সাধ আছে,সাধ্য নেই অবস্থায় কতোদুরই যেতে পারবে তারা। মেধার আলোয় আলোকিত হবে হয়তো অল্পশিক্ষিত কোন বরের রান্নাঘর।অথবা কোন এন,জি,ওর  প্রি-প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্বরবর্ণ,নামতা শিখাতে বা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে কিস্তির হিসাব দিতেই ব্যস্ত  থাকবে।ভূলে যাবে চিকিৎসক  হওয়ার স্বপ্ন।

    নুন আনতে পান্তা ফুরায় সংসারের ভাত-কাপড়ের চাহিদা মিটাতে হিমশিম অবস্থা যাদের,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়ানো তাদের জন্য ভাঙা ঘরে ছেড়া কাঁথায় আকাশছোঁয়া স্বপ্ন বৈকি।কিন্তু অপ্রতিরোধ্য দারিদ্র্যের সুকঠিন বাধা ডিঙিয়ে এতটুকো পথ যারা পাড়ি দিতে পেরেছে,শাণিত মেধার মঙ্গল আলোয় স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়ে তারা এগিয়ে যাবেই।