শেরপুরের সরিষা ক্ষেত থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু আহরণ

    0
    275

    আমারসিলেট24ডটকম,০৪ফেব্রুয়ারীঃ শেরপুরের গ্রামের পথে পা বাড়ালেই নজরে পড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার ক্ষেত। ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। অনুকূল আবহাওয়া, দাম ভালো থাকায় জেলায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে।
    কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষার এ আবাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভিন্নতাও। মৌমাছি দিয়ে সরিষার ফুল থেকে আহরণ করা হচ্ছে মধু। কৃষকরা বলছেন, এ মধু আহরণের জন্য তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা প্রদান করলে, তারাও সরিষার চাষের পাশাপাশি মধু আহরণ করে আরও লাভবান হতে পারবে।
    সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শেরপুরের সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকদের কৃষি ফসল উৎপাদনের ভিন্নতাও এসেছে। যেসব ফসলে সেচ কম লাগে এবং বাজারে দাম ভালো সেসব ফসল উৎপাদনে কৃষক ঝুঁকছেন।
    সরিষা ক্ষেতে সেচ কম লাগায় এবং সরিষার বাজার মূল্য ভালো থাকায় দিনে দিনে জেলায় সরিষার আবাদ বাড়ছে। গ্রামের পথে পা বাড়ালেই দেখা মিলছে হলদে-সরিষা ফুলের সমাহার। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে ফুলের চাদরে ক্ষেতগুলোকে ঢেকে দিয়েছে। কাছে গেলে দেখা যায়, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষীরা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মৌমাছি দিয়ে আহরণ করছে মধু।
    কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছিদের গায়ে লাগা ফুলের পুংকেশর ফল উৎপাদনের পূর্বশর্ত পরাগায়নে সাহায্য করছে। এ যেন সরিষা ফুল ও মৌমাছির অপূর্ব সম্পর্ক। এর ফলে বেড়ে যায় সরিষার ফলনও।
    কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে আমন ধান উঠার পর বোরো লাগানোর আগ পর্যন্ত জমিগুলো ফাঁকা থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক আগে থেকেই জমিগুলো সরিষা চাষের উপযোগী হয়।
    একদিকে অনুকূল আবহাওয়া ও কম খরচ, অন্যদিকে বাজার মূল্য ভালো এবং বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে কৃষক এবার বেশিরভাগ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নকলা উপজেলার কৃষব শাহজাদা স্বপন এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তার মতো নকলার চন্দ্রকোণা গ্রামের আমজাদ হোসেন, নেপাল চৌহানসহ অনেক সরিষা চাষীরা বলেন, সরিষা আবাদ আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝের সময় হয়।
    সেচ কম লাগে, দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি গরুর ভালো খাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সরিষা চাষের ব্যাপারে নকলা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর সরিষা চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া থাকায় ব্যাপক জমিতে চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে সেচ কম লাগে। বাজারে দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি পশুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সঙ্গে সরিষা ফুল থেকে পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মধু।
    এ বছর গাজীপুরের মীক মৌ খামার নামে একজন ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষী চন্দ্রকোণা গ্রামে মধু আহরণ করছেন। এ ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষী নূরুল ইসলাম রিপন জানান, বিসিক থেকে মাত্র ৭ দিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এ মৌ-চাষ শুরু করেছিলেন। মাত্র ৪/৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই ভাল আয় করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
    চন্দ্রকোনা এলাকায় ১২৪টি মৌবাক্স স্থাপন করে গড়ে প্রতিবাক্স থেকে সপ্তাহে দুইবার প্রায় ২/৩ কেজি করে মধু আহরণ করা হয়। প্রতিকেজি মধু বিক্রী হয় গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষ করে এলাকার কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি বেকারদেরও কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলে তিনি জানান। স্থানীয় কৃষকরাও তার মধু আহরণ দেখে, নিজেরাই মধু আহরণে উৎসাহী হয়েছেন। তারা চাইছেন প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা। আর এটা হলে তারাও বাড়তি আয় করে লাভবান হতে পারবেন বলে তারা জানান।খবর বাসস।