শান্তিতে নোবেল জয়ীর অশান্ত বক্তব্য !

    0
    256

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরশান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কেউ বানের জলে ভেসে আসেনি। গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর হাত দিলে সে হাত ভেঙে দেয়া হবে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন মানব না। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনের চিন্তা যাতে কারো মাথায় না আসে।
    গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের গরম বক্তব্যের পর পাল্টা জবাব এসেছে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। এ নিয়ে রাজনৈতিক ও পর্যবেক্ষক মহলে চলছে  আলোচনা সমালোচনা।
    নোবেল জয়ী  ড. ইউনূস নির্বাচন ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে এমন সময় বিস্ফোরক মন্তব্যগুলো করলেন, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি। জনগণ চরম উদ্বিগ্নতায় প্রহর গুণছে কী ঘটবে ২৪ অক্টোবরের পর।
    পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও ড. ইউনূস ছিলেন অনেকটাই চুপচাপ। বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিক ও বিদেশি মিত্রদের সহযোগিতায় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাননি দেশের একমাত্র নোবেল জয়ী। শেষ মুহূর্তে এসে ইউনূসের এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। অনেকের মতে, নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষায় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য শেষ সময়কে তিনি বেছে নিয়েছেন। আর এই সময়ে ইউনূসের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে ইউনূসের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
    বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের বক্তব্যের একদিন পর শুক্রবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে তিনি ড. ইউনূসের বক্তব্যকে অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন। নানক বলেন, শব্দবোমায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত করা কোনো মতে কাম্য হতে পারে না। উন্মাদনার প্রশ্রয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নেই। কারো অসৎ উদ্দেশ্যের চরিতার্থ এই বাংলার মাটিতে হবে না।
    কী ছিল ড. ইউনূসের সেই বক্তব্য
    নোবেল জয়ী ইউনূস সুহৃদ পরিষদ নামে চট্টগ্রামের একটি সংগঠন ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার নগরীর লেডিস ক্লাবে নারী সমাবেশের আয়োজন করে। চট্টগ্রামের সন্তান ড. ইউনূসকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়।
    সমাবেশে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান, চিটাগাং উইমেন চেম্বারের সভাপতি কামরুন মালেক, নারীনেত্রী জিনাত আজম, বেগম রুনু সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
    ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনের চিন্তা যাতে কারো মাথায় না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণর্ভাবে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন সকল দল অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন আমরা মানব না। আমরা অশান্তি চাই না, শান্তিতে ভোট দিতে চাই।’
    তিনি বলেন, দেশের অবস্থা খুব খারাপ। সবার মধ্যেই আতঙ্ক ২৫ অক্টোবরের পর কি হবে? ঘর থেকে বের হতে পারব তো ? স্বাধীন দেশে এত অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক কেন ? নির্বাচনও কি কারো খেয়াল খুশিমতো হতে হবে? আমরা কি ভোট দিতে পারব না ? সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো দুর্যোগের মধ্যে পড়তে চাই না। এখনো সময় আছে, অশান্তির দরজা যাতে খুলে না যায় সেই ব্যবস্থা নিন। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। নিয়মের মধ্যে থাকতে চাই।’
    গ্রামীণ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে আনার সরকারি উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বানের পানিতে ভেসে আসিনি। আমরা কি এ দেশের নাগরিক নই? চট্টগ্রাম থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের উৎপত্তি। এই ব্যাংক এখন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ব্যাংক রক্ষায় সবাইকে একজোট হতে হবে। এটি গরিব-দুস্থ নারীদের সম্পদ। এই ব্যাংকে যেন কারো অাঁচড়ও না লাগে। আমাদের বলতে হবে, খবরদার ! যে এটাতে হাত দেবে আমরা তার হাত ভেঙে দেব।
    গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, এটা কি আপনারা মানবেন? উপস্থিত নারীরা এ সময় সমস্বরে না বলে উত্তর দেন।
    ইউনূস বলেন, ৮৪ লাখ মহিলার গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার দখলে নিতে চাচ্ছে। এজন্য সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে। সরকার আমার ওপর আক্রমণ করছে। আমরা গরিবদের জন্য ব্যাংক বানিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার যেমন ইচ্ছা তেমন কথা বলছে। আমাকে রক্তচোষা, ঘুষখোর, সুদখোরও বলছে। অথচ আমি গ্রামীণব্যাংকের মালিক নই, আমি সুদখোর হলাম কিভাবে।
    গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে কম দাবি করে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত সুদের হার যেখানে ২৭ শতাংশ সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ২০ শতাংশ। আবার কখনো বলে আমি নাকি গ্রামীণ ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছি। পরে বলে, ৩০ হাজার না, ১০ হাজার টাকা লোপাট করেছি। তদন্ত কমিশন একটা করেছে, সেই কমিশন তদন্ত রিপোর্টই দিতে পারছে না।
    আর আমি কি ব্যাংকের মালিক ? সব মালিকানা তো দিয়ে দিয়েছি। চাইলে আমি শুরু থেকে এর মালিক হতে পারতাম। ইউনূস বলেন, গ্রামীণব্যাংকে ২৫ হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি করে, কারো চাকরির জন্য কাউকে এক টাকাও ঘুষ দিতে হয়নি। অথচ যেখানে সমস্যা আছে তা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
    দেশের বিভিন্ন অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ। মুসলমান দেশের অভ্যাস, নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখা। কিন্তু সম্পূর্ণ মুসলমানিত্ব বজায় রেখে, সেই কাঠামোর ভেতরে থেকে নারীরা এদেশকে পাল্টে দিয়েছে।’
    তিলে তিলে মহিলারা এই ব্যাংক গড়ে তুলেছেন মন্তব্য করে আলোচিত এই ব্যাংকার বলেন, ‘তারা তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশকে নোবেল এনে দিয়েছে। আর এটা সরকার নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
    ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হওয়ার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
    অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১১ সালে তার এমডি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।