শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা

0
953
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা


নুরুজ্জামান,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী শহর দিঘা। সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে শহরটির বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে গেছে, ডুবে গেছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নামিয়ে চালানো হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে,১৫০ কিঃ মিঃ বেগে আসার এক পর্যায়ে দুর্বল হতে হতে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিকে এগিয়ে যায়, এ সময় সব মিলিয়ে ৫১টি বাঁধ ভেঙে গেছে। উপকূলবর্তী এলাকায় ৭০ কিলোমিটারের বেশি নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সেখান থেকে প্রায় চার লাখ মানুষকে নিরপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাওয়া যায়নি।
বুধবার (২৬মে) সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে আছড়ে পড়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে কোটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে। তবে তার আগে থেকেই প্রভাব শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায়। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। জল ঢুকতে শুরু করেছে উপকূলবর্তী এলাকায়। এ ভাবে জলোচ্ছ্বাসের একটা বড় কারণ ভরা কোটাল বলেই জানাচ্ছে মৌসম ভবন। সংবাদ আনন্দবাজার
আজ বুধবার পূর্ণিমা। সেই সঙ্গে রয়েছে চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় জোয়ার। সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে জোয়ার। জোয়ার চলাকালীন জলের উচ্চতা সর্বাধিক সাড়ে ৫ মিটার ছাড়িয়ে যায়। অন্য দিকে বুধবার দুপুর ৩টো ১৫ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। ২০২১ সালে এটিই প্রথম ও শেষ ‘ব্লাড মুন’ হতে চলেছে।
আগে পূর্বাভাস ছিল বুধবার দুপুরের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে ইয়াস। কিন্তু গতি বাড়িয়ে বুধবার সকাল ৯টা ১৫ থেকেই শুরু হয়েছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া। ফলে ভরা কোটাল ও ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে আছড়ে পড়া প্রায় একই সময় হয়েছে। আর এই জোড়া ফলায় দুর্যোগ ও দুর্ভোগ বেড়েছে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের। একদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর এলাকা জলমগ্ন, অন্য দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বকখালি প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক গ্রামে জল ঢুকেছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘূর্ণঝড়ের পরে এ বার রাজ্যে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভরা কোটালে প্লাবনের আশঙ্কা করছে রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘বুধবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে উপকূল এলাকায় প্লাবন আসতে পারে। ত্রাণ শিবিরে যাঁরা আছেন, তাঁরা এখনই বাড়ি ফিরবেন না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যে নদীর কাছাকাছি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। সাধারণ মানুষকেও বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি নিজের বাড়িতেও তাই করেছেন। গঙ্গার আশপাশের এলাকায় সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জলমগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ যেন বিপদের কারণ না হয়ে ওঠে সেই জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও সিইএসসি যেন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে, সেই নির্দেশও দেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। পুলিশকেও সতর্ক করেছেন তিনি।

এদিকে মমতা জানান, বৃহস্পতিবার (২৭) আরও বড় বান আসতে পারে সমুদ্রে। সঙ্গে বৃষ্টি ও হতে পারে। নদীতে ৫ ফুট উঁচু বানের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাঁরা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন তাঁদের সেখানেই থেকে যেতে বলার পাশাপাশি মমতা বলেন, ‘‘নদীর আশপাশের এলাকায় কারও বাড়িতে জল ঢুকে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা দেখা দিলে কাছাকাছি কোনও ক্লাব বা ভাল জায়গায় আশ্রয় নেন।’’ এই ব্যাপারে পুলিশকেও সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে ১ কোটি মানুষের ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যে ১৩৪টি নদী বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝড়-বৃষ্টিতে। অনেক কৃষি জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। এর ফলে ফসলের ক্ষতিও হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘দিনে অনেক এলাকায় জল ঢুকে গিয়েছে। বুধবার রাতে সেটা আরও বাড়তে পারে। তাই সকলকে রাতটা সতর্ক থাকতে হবে।’’
কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আজ সকালে জানিয়েছে, সকাল সাড়ে আটটা থেকে কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে কোনো বিমান ওঠানামা করবে না। একই ঘোষণা দিয়েছে ওড়িশা সরকারও। সেখানকার রাজধানী ভুবনেশ্বরের বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।