রাত্রির মাঝেই আলোর নিশান

    0
    251

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৬অক্টোবর,আশিকুল কায়েসঃ  মানবতা আজ যখন ধুকে ধুকে চিৎকার করে কাঁদছে আর সমাজের আজব প্রাণহীন মানুষগুলো যখন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে তখন লুটিয়ে পড়া মানবতাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরার জন্য আবির্ভাব হয় নতুন এক রাত্রির। আমি সেই রাত্রির কথা বলছি যাকে নিয়ে বাংলাদেশ তরুণ লেখক পরিষদের গর্ব। বাংলাদেশ তরুণ লেখক পরিষদের রাজশাহী জেলার সদস্য হৃদিতা রাশা রাত্রি কালো কাপড়ে মোড়ানো সমাজটাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মানবতার চিহ্ন। সৃষ্টি করলেন মানবতার এক নতুন এক নজির।
    ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখের কথা। মুক্তি এফএম রেডিওতে ‘নিশুতি গল্প’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত অসহায় রিয়ার জীবনের কাহিনী যে কাউকে কাঁদাতে বাধ্য করবে। রিয়ার মা সুইডেন প্রবাসী। কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসে কৌশলে বাবার কাছ থেকে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। মেয়েটি তখন প্যাথলজি নিয়ে সাইক মেডিকেলে পড়ে। বাবাকে তাড়িয়ে দেয়ার পর নিষ্ঠুর মা রিয়াকে নিজের কাছে রেখে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন চালায়। পড়াশোনাও বন্ধ করে দেয়, এমনকি বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল ফোন কেড়ে গৃহবন্দী করে রাখে।
    একপর্যায়ে রিয়ার উপর অতিমাত্রায় নির্যাতনের ফলে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবার কাছে আসতে বাধ্য হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বাড়ি, গাড়ি সবকিছু হারিয়ে বাবা যাযাবরের মত জীবন যাপন করছে। অর্থ রোজগারের অবলম্বন হিসেবে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনে হাজিরা হিসেবে দিনপ্রতি মজুরি পান ২০০-৩০০ টাকা। তাতেকরে নিজের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করে দুজনের চলা ছিল খুবই কষ্টের। এই অবস্থায় যতসব নৈতিকতা ও সুশাসন শেখানো সমাজের কাছে হাতজোড় করে এফএম রেডিওতে কেঁদে কেঁদে বলছিল রিয়াকে একটু ঠাঁই দেওয়ার কথা। সেও মানুষের মত বাঁচতে চায়, বর্বর মাকে দেখিয়ে দিতে চায় সেও ভালো থাকতে পারে।
    তাঁর আত্মচিৎকার শুধু রেডিওতে কথার কথা থেকে যায়। অথচ সমাজ ও দিন বদলের যেসকল মহাপুরুষেরা বড় বড় কথা বলেন আর কথায় কথায় নৈতিকতা শেখান। রিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সময় তাঁরা ছিলেন নির্বাক আর রেডিওতে তার আকুতি প্রচার হবার সময় সুশীল সমাজের ভদ্রলোকেরা সেজেছিলেন বধির।
    সেই সুশীল সমাজের মানুষের মুখে থাপ্পড় দিয়ে রিয়ার কষ্টের ভাগ নিতে এগিয়ে যায় দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্রী রাত্রি নামের মেয়েটি। ২ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে বগুড়া থেকে বাবার কাছ থেকে রিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রাত্রির পরিবারের সদস্য বলতে একমাত্র মা আর বাবা (প্রবাসী)। ভাড়া বাড়িতে তাদের বসবাস। সংসার চলে কোনরকম। রিয়ার ইচ্ছে পূরণে ৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে রাজশাহীতে স্থানীয় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের ৬ সেমিষ্টারে ভর্তি করে। মোটের উপর মেডিকেলের খরচ কিন্তু চারটেখানি কথা নয়। রিয়া ও নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে তাকে এখন কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হয়। টিউশনির মাধ্যমে সারাদিনের সময়টা পার করতে হয় তাকে। নিজের পড়াশোনার আর টিউশনি দুইয়ে মিলিয়ে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষভাগে বাসায় ফিরে রাত্রে রাশা নিজের হাসিটা দেখতে পায় রিয়ার মধ্যে।