রাঙামাটি-চট্টগ্রাম-বান্দরবানে কমপক্ষে ৬১ জনের প্রাণহানি

    0
    245

    “প্রাথমিক তথ্যঃ রাঙামাটিতে- ৪২, চট্টগ্রামে-১২ ও বান্দরবানে-৭ জন নিহত,এ সংখ্যা বাড়তে পারে”!

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৩জুন,ডেস্ক নিউজঃ   টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে এ পর্যন্ত ৬১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গাছচাপা, দেয়ালচাপা ও বজ্রপাতে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

    এর মধ্যে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে চার সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৪২ জন, চট্টগ্রামে ১২জন ও বান্দরবানে ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

    এ ছাড়া রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন ও কর্ণফুলী নদীতে প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে পড়ে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। চট্টগ্রামের হালিশহরে দেয়াল ধসে একজন, চাক্তাইয়ে বজ্রপাতে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

    মঙ্গলবার ভোররাত থেকে অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনো চলছে। এসব ঘটনায় আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

    বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।

    এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়। অনেক স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।

    রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা, সদস্যসহ ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ জন, কাউখালী উপজেলায় ১২ জন, কাপ্তাই উপজেলায় দুজন নিহত হয়েছেন।

    এ ছাড়া শহরের পাশে মানিকছড়ি এলাকায় উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    তবে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে দুপুরে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, হতহাতের প্রকৃত সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ, নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

    এ ছাড়া গাছচাপা পড়ে কাপ্তাই উপজেলায় আরো একজন নিহত হয়েছেন। নদীতে নিখোঁজ আছেন একজন।

    এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাশের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

    আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রাশিদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, “মঙ্গলবার সকাল ৭/৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষায় পাহাড় ধসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক পুনরুদ্ধারে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর একটি দল। সংযোগ সড়ক পুনরুদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মানিকছড়ি এলাকায় সেনা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।”

    এ ছাড়া কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং এখনো কয়েকজন নিখোঁজ আছেন। সে কারণে হতাহতের সংখ্যা সঠিক বলা যাচ্ছে না বলেও জানান আইএসপিআরের পরিচালক।

    নিহত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন হলেন মেজর মাহফুজ ও অন্যজন ক্যাপ্টেন তানভীর। নিহত দুই সেনাসদস্যের নাম পাওয়া যায়নি। এ সময় আহত চার সেনাসদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান।

    ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে এসপি আরো জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড় ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

    এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাহাড় ধসে নিহত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানভীরের লাশ এসেছে। এ ছাড়া আরো তিন সেনাসদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন।

    শহরে নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। তারা শহরের যুব উন্নয়ন ও ভেদভেদি এলাকায় বসবাস করতেন।

    রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা একটা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। শহরের যুব উন্নয়ন, ভেদভেদি, শিমুলতলি, রাঙাপানিসহ অনেক স্থানেই এখনো মানুষ মাটি চাপা পড়ে আছে।”

    এদিকে, জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে উনু চিং মারমা (৩০) ও নিকি মারমা (১২) নামের দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা।

    এ ছাড়া উপজেলায় গাছচাপা পড়ে আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন।

    তিনি আরো জানান, কর্ণফুলী নদীতে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

    এদিকে, রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বাড়তি ইউনিট কাজে যোগ দিতে আসছে।

    চট্টগ্রামের প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চন্দনাইশে চারজন ও রাঙ্গুনিয়ায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

    মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মাসুদের পাঠানো এক বার্তায় পাহাড় ধসে হতাহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

    এ ছাড়া হালিশহরে দেয়াল ধসে একজন, চাকতাইয়ে বজ্রপাতে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) হামিদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    এ দিকে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সোমবার রাতে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আজগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

    এ ছাড়া ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) এবং গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং (৫০) নিহত হন।

    এ ঘটনায় ওই পরিবারের সানুউ কেয়াং (২১) ও বেলাউ কেয়াং (২৮) নামের আরো দুজন আহত হয়েছেন। তাদের বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী।

    এ দিকে জেলা প্রশাসনের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর বগাবিলে পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

    বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন।

    মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ।

    নিহতরা হলেন- লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তার মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)।

    এ সময় আহত আরো পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।

    এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

    প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

    অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।