মাদকাসক্তের পক্ষে আন্দোলন করে ৪০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধনের অভিযোগ

0
556
মাদকাসক্তের পক্ষে আন্দোলন করে ৪০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধনের অভিযোগ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, আমরা মূল বিষয়টি জানতে পারিনি। সংগঠনের নেতারা যখন যা বলে, আমরা পালন করতে এগিয়ে আসি। সে দিন মুলত কি ঘটেছিল আমারা কিছুই জানি না। আমরা ঘটনার সুষ্ট তদন্ত এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাই।

রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল চা-বাগানের বহিস্কৃত শ্রমিক কর্তৃক বাগানের মেকানিককে মারধর। মূলঘটনা ধামাচাপা দিতে চা-বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতী পালন। মাদকাসক্ত শ্রমিকের পক্ষ নিয়ে শ্রমিক সংগঠন কর্তৃক আন্দোলন করে বাগানের উন্নয়নে বাঁধা ও ৪০ লক্ষাধিক টাকার উত্তোলিত চা-পাতার ক্ষতি সাধন দাবী কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, লালাখান চা-বাগানের শ্রমিক মরম আলীর ছেলে ইমু মিয়া (২৫) অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে বাগানে কাজ করে। বিভিন্ন সময় সে বাগানের কর্মরত ঠিলা বাবু, মেকানিক ও কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তার অপরাধে ইতোপূর্বে কয়েকবার সাময়িক বহিস্কার হয়। পরবর্তীতে অপরাধ করবে না মর্মে লিখিত মুচলেকা দিয়ে কর্ম ক্ষেত্রে যোগদান করে। গত ৩সপ্তাহ পূর্বে টিলাবাবু সুহেল ও ষ্টোর বাবু জাহাঙ্গীর এর সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করায় থাকে বহিস্কার করা হয়।

গত ২৩ আগষ্ট সকাল সাড়ে ১০টায় কারখানার পাশে বাগানের ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান নেয় বহিস্কৃত শ্রমিক ইমু মিয়া। বহিস্কারের কারনে বাগানের ব্যবস্থাপক অলিউর রহমান চৌধুরীকে উত্তেজিত করতে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে সে। তার আচরণ দেখতে পেয়ে সিনিয়র মেকানিক সিদ্দিক আলী ধমক দিয়ে অফিস এলাকা হতে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর মেকানিক সিদ্দিক আলীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গ্যারেজে প্রবেশ করে সিনিয়র মেকানিক সিদ্দিক আলীকে না পেয়ে অশ্লিল ভাষায় গালিগলাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্যারেজে থাকা মেকানিক শিপন মিয়াকে মারধর শুরু করে।

মারধরের খবর পেয়ে বাগানের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এগিয়ে গিয়ে শিপন মিয়াকে উদ্ধার করে। আহতবস্থায় জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। এঘটনায় শিপন মিয়া বাদী হয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

মাসকাসক্ত শ্রমিক কর্তৃক বাগানের কর্মচারীকে মারধরের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শ্রমিক সংগঠন ফন্দি খোঁজে। তারা ঘটনার সত্যতা জানার পরও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ না দিয়ে দুই দিন কর্মবিরতি পালন করে। এমনকি বাগানের নৌকা ছাড়াও বাগানের বাহিরের নৌকা ব্যবহারে বাঁধাদেয়। এ কারনে লালাখাল চা-বাগানের উত্তোলিত প্রায় ৪০লক্ষধিক টাকার চা-পাতা সটিক সময়ে পক্রিয়াকরণ এবং পরিবহন না করায় পচন ধরে বিনষ্ট হয়।

শ্রমিক সংগঠন বিষয়টি ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ঐ ঘটনায় ৪জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পা ায়েতে বিচার ও ১জন কে অপসারণ দাবী জানিয়ে ব্যবস্থাপক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে। ২৬ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, আমরা মূল বিষয়টি জানতে পারিনি। সংগঠনের নেতারা যখন যা বলে, আমরা পালন করতে এগিয়ে আসি। সে দিন মুলত কি ঘটেছিল আমারা কিছুই জানি না। আমরা ঘটনার সুষ্ট তদন্ত এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাই।

পা ায়েতের সভাপতি নগেন্দ্র গোয়ালার পক্ষে সদস্য অরুন বোনার্জী বলেন, ইমু মিয়া ব্যবস্থাপক এবং মেকানিকের সাথে খারাপ আচরণ ও মারধর করার বিষয়টি সটিক এবং সে নিজেও আত্রুান্ত হয়। বিষয়টি সুষ্ট সমাধানের জন্য ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় দুই দিন কর্মবিরতি পালন করি। রোববার এর মধ্যে সমাধানের লিখিত দাবী জানিয়ে কর্মবিরতী প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করি। সমাধান না হলে সোমবার হতে পুনরায় কর্মবিরতী পালন করা হবে। বিষয়টি আমাদের শ্রমিক ফেডারেশনকে জানানো হলে তারা সরজমিনে তদন্ত শুরু করেছে।

মেকানিক শিপন মিয়া বলেন, ইমু কোথায় কি করেছে জানি না। গ্যারেজে প্রবেশ করে কিছু বুঝে উঠার আগেই আত্রুমন করে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আইনের আশ্রয় চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করি।

লালাখাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক অলিউর রহমান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকরা আমার সাথে ঘটনার বিষয়ে না জানিয়ে কর্মবিরতী পালন করে। যার কারনে বাগানের প্রায় ৪০লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। কিছু শ্রমিকরা বাগানের নৌকা ছাড়াও এলাকার নৌকা ব্যবহারেও বাঁধা সৃষ্টি করে উত্তোলিত চা-পাতা বিনষ্ট করে। তারপরও বাগান ও শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে আমি নিজ উদ্যোগে মন্ডপে তাদের ডাকা সভায় বিনা আমন্ত্রনে উপস্থিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে মিমাংশার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কাজে ফিরে। তারপর শ্রমিকরা ঘটনার বিচার চেয়ে আমার নিকট লিখিত অভিযোগ জানায়।