ব্যাংক থেকে ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পুলিশ কনস্টেবলদের প্রতি !

0
63

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টায় রাজধানীর পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকের শাখায় ‘কর্পোরেট আইডিয়াস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২১ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিচ্ছিলেন মার্কেটিং অফিসার মো. আজিম। এসময় হঠাৎ দুই পুলিশ সদস্য বাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে হাজির হন। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকার হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে টেনেহেচড়ে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসেন। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকা নিয়ে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দিন-দুপুরে ব্যাংকের ভেতর থেকে অবিশ্বাস্য কায়দায় টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা জানাজানির পরপরই জড়িতদের গ্রেপ্তারে অপারেশন শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশসহ একাধিক টিম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযানের পর সন্ধ্যায় ছিনতাই চক্রের জড়িত দুই পুলিশ সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফ, কর্পোরেট আইডিয়াসের কর্মী শাহজাহান, দোকান কর্মী হৃদয় ও তার বন্ধু রাসেল। একাধিক সিসি ক্যামেরা থাকলেও পুলিশের দুই সদস্য কিভাবে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটালো,এটা ভেবে অনেকে বিস্মিত। সিসি ক্যামেরার আওতাধীন ব্যাংকের ভেতর থেকে এমন ছিনতাই কাণ্ডের ঘটনাও বিরল।

মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্য ডেমরা লাইনের সদস্য। তারা বর্তমানে সাসপেন্ডকৃত সদস্য নন। ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জন জড়িত ছিলেন। সবাইকে গ্রেপ্তার করা গেছে। গ্রেপ্তারকৃত বাকি তিনজনের মধ্যে একজনের বন্ধু হলেন পুলিশের এক সদস্য। ওই বন্ধু ফোনে পুলিশ সদস্যকে বলেছিলেন ওই ছিনতাই অপারেশনে জড়িত বলে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।”

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ছিনতাইয়ের এই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হলেন কর্পোরেট আইডিয়াসের কর্মচারি শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল। পল্টনে চায়ের দোকানের কর্মচারি হৃদয়। পুরানা পল্টনে কর্পোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। দ্রুত পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপরই দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বে নেন। এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।

পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ব্যাংকের ভেতর-বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্যদের বিষয়টিও বেরিয়ে আসে। এক লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরপরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তখন তার ব্যাগে ২১ লাখ টাকা ছিল।’

করপোরেট আইডিয়াসের কর্ণধার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “অন্যান্য দিনের মতো মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে দ্রুত পুলিশকে জানাই। পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটা শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এই ছিনতাই কাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘ দিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করা গেছে এটা ভালো খবর। শুনেছি সব টাকা উদ্ধারও হয়েছে।”

ডিবির মতিঝিল বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা জানার পর থানা পুলিশকে অপারেশনে আমরা কিছু সহায়তা করেছি। তথ্যসূত্র সমকাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here