বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় মৃতুদণ্ড১৫৪ খালাস২৭১

    0
    245

    আমার সিলেট  24 ডটকম,০৫নভেম্বরঃ পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা দায়ে জীবিত  ৮৪৬ জনের মধ্যে ৬৮৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।  রায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫৪ জনকে মৃতু্দণ্ডের  আদেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০জনকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে । ২৫১ জনকে তিন থেকে দশ বছর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় ২৭১ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

    এছাড়া আসামীদের সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পরপরই বেকসুর খালাস পাওয়া ২৭১ জন আদালতের ভেতরে উল্লাস প্রকাশ করেন। তাঁরা আঙুল উচিয়ে বিজয়সূচক চিহ্ন দেখান। পরে গাড়িতে করে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের।

    রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আদালত ১৫১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম সর্দার ১৫৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করে আপিল করার কথা জানিয়েছেন। বিচারক আখতারুজ্জামানও রায় শেষে বলেছেন, কোথাও বিভ্রান্তি থাকলে দুপুরের পরে তিনি তা সংশোধন করে দেবেন।
    এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে রায় পাঠ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর আদালতের কার্যক্রম শুরু করায় বিচারক মো. আখতারুজ্জামান শুরুতেই দুঃখপ্রকাশ করেন। এরপর রায় পাঠের শুরুতেই বিচারক মামলার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এতে তিনি জানান, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অপারেশন ডালভাত এর অর্থসংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে জড়ানো ঠিক হয়নি। এছাড়া এ বিদ্রোহের তথ্য আগে জানতে না পারার ঘটনায় গোয়েন্দা দুর্বলতা  ছিল বলেও মনে করছে আদালত। রায় পাঠকালে সংশ্লিষ্ট আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। সকাল থেকেই আদালত ঘিরে নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। আলিয়া মাদরাসা মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। বকশিবাজার ও উর্দু রোড দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
    ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের প্রায় চার বছর আট মাস পর এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে আজ । গত ৩০ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণার তারিখ থাকলেও রায় প্রস্তুত না হওয়ায়, ওইদিন রায় ঘোষণার জন্য ৫ নভেম্বর তারিখ ঠিক করা হয়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে ঢাকার জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে আসামি ও রাষ্ট্র পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
    এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইতিহাসে এত বড় মামলা আর কখনো হয়নি। মামলায় সাড়ে আটশ  আসামির বিষয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মাত্র দু’সপ্তাহ আগে মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে। তাই এ মামলায় রায় প্রস্তুত করতে সময় লাগছে।২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

    এ মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র  দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় প্রথমে ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। দুই মামলার বিচার একইসঙ্গে চলে। মামলায় ২০ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও রয়েছেন।
    বিডিআর বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ইতিমধ্যে এ বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচার শেষ  হয়েছে। তবে ৭৪জনকে হত্যা, লুণ্ঠনসহ অন্য অভিযোগের বিচার প্রচলিত আইনে পরিচালিত হয়েছে। এ মামলায় সব শেষে ১৫৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের  আদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পিন্টু ও তোরাব আলীসহ ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২৫১ জনের সর্বনিম্ন ৩ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।