বাংলাদেশ তার অফুরান প্রাণশক্তিতে এগুতে পারে তা যদি দুর্নীতিমুক্ত ও লুটেরাদের হাত থেকে রাজনীতি অর্থনীতি মুক্ত করা যায় : মেনন

    0
    248
    বাংলাদেশ তার অফুরান প্রাণশক্তিতে এগুতে পারে তা যদি দুর্নীতিমুক্ত ও লুটেরাদের হাত থেকে রাজনীতি অর্থনীতি মুক্ত করা যায় : মেনন
    বাংলাদেশ তার অফুরান প্রাণশক্তিতে এগুতে পারে তা যদি দুর্নীতিমুক্ত ও লুটেরাদের হাত থেকে রাজনীতি অর্থনীতি মুক্ত করা যায় : মেনন

    ঢাকা, জুন: “মানবিকতা দিয়ে বিপর্যয় মোকাবেলা করার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এদেশের জনগণের সহজাত। ঝড় ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছাস প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক বিপর্যয় এদেশের মানুষ বার বার ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করেছে। প্রতিটি সংগ্রামে এদেশের জনগণ জিতেছে, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, তার গৌরব হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। রানা প্লাজা ভবন ধসে ব্যক্তি মানুষ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্ধার কর্মী, কিশোর উদ্ধার কর্মী, নারী উদ্ধার কর্মী সর্বস্তরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে জীবন উদ্ধারের যে স্পর্ধা দেখিয়েছে তার তুলনা বাংলাদেশ নিজেই। রানা প্লাজা মানব সৃষ্ট দুর্যোগ, এই দুর্যোগের পিছনে রয়েছে সীমাহীন মুনাফা ও লুটের-দুর্নীতির মানসিকতা। ঐ লুটেরা দুর্নীতিবাজদের জন্যই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে হাজার হাজার মানব সন্তান। আহত হয়েছে, চিরপঙ্গু হয়েছে শত মানুষ। এটা মেনে নেয়া যায় না। ঝড়-ঝাঞ্ছা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো ঐতিহ্যগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐ দুর্নীতি মুনাফাবাজী লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। বাংলাদেশ তার অফুরান প্রাণশক্তিতে এগুতে পারে তা যদি দুর্নীতিমুক্ত ও লুটেরাদের হাত থেকে রাজনীতি অর্থনীতি মুক্ত করা যায়।”

    DSC_0538বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে রানা প্লাজা উদ্ধার কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি, স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মান জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে জননেতা রাশেদ খান মেনন উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। ঢাকার নীলক্ষেতে পরিকল্পনা উন্নয়ন একাডেমী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার অডিটোরিয়ামে গতকাল সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট প্রাক্তন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আজকের এই সম্মান জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করলো। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে আরো বেগবান করবে এই মহতী সম্মান জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, দেশে এখন কৃষ্ণ পক্ষের সময় চলছে; ঐক্যবদ্ধভাবে কৃষ্ণ পক্ষকে মোকাবেলা করে শুক্ল পক্ষের দিকে যেতে হবে। রানা প্লাজা সেই শিক্ষা দিয়েছে; সাহস দিয়েছে। শ্রমিক, কৃষক মেহনতী মানুষের প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টিকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমরান প্রমুখ।

    অনুষ্ঠানে ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ২০০ উদ্ধার কর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্রেস্ট এবং উদ্ধার কর্মীদের মেডেল প্রদান করা হয়।

     

    এনাম মেডিকেল ও হাসপাতালের কর্ণধার ডাঃ এনামুর রহমান জননেতা রাশেদ খান মেননের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন এবং তিনি বলেন, “আমাদের সাধ্যক্ষমতা সবটুকু কাজে লাগিয়েছিলাম ঐ উদ্ধারে; আমাদের যে সক্ষমতা এখন দেখাতে পেরেছি তা যদি ’৭১ সনে দেখাতে পারতাম তাহলে তিন মাসেই দেশ স্বাধীন করতে পারতাম।”

    ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন মোঃ আব্দুস সালাম, ডাইরেক্টর প্রশাসন ও অর্থ এবং ভরত চন্দ্র বিশ্বাস, উপ-পরিচালক অপারেশন। অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে সিনিয়র শিক্ষক জনাব ইউসুফ হারুন ও সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। ঢাকা জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফারুক হোসেন। বাংলাদেশ স্কাউটস ও ঢাকা জেলা রোভার এর সেক্রেটারি মোঃ ওমর আলী এলএলটি।

    অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করে আরো বক্তব্য রাখেন নাট্যকর্মী আসমা আকতার লিজা, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রওশন জাহান লিসা, প্রভাতী আইডিয়াল স্কুলের কিশোর নবম শ্রেণীর ছাত্র মনোয়ার হোসেন তুষার। উদ্ধার কর্মী কায়কোবাদ ও ওমর ফারুকের প্রতি বিশেষ সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। জননেতা মেনন ওমর ফারুকের মা আছিয়া বেগমকে সংবর্ধিত করেন। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে রানা প্লাজার দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে পঙ্গু হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ আহত ২০০ শ্রমিককে চিকিৎসা সহায়তায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

    অনুষ্ঠানের শুরুতে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার শিকার নিহত সকলকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং অনুষ্ঠানে একটি দাবিনামা উত্থাপন করা হয়। দাবি নামায় বলা হয়Ñ

    ১. নিহত ও আহতদের জন্য “লস অব আনিং”এর ভিত্তিতে বৃহত্তর ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

    ২. সকল আহত শ্রমিকদের সরকার এবং গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে উন্নতর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে এবং পুর্ণবাসন করতে হবে।

    ৩. রানা প্লাজার সকল শ্রমিককে এককালীন ৩ মাসের বেতন ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে।

    ৪. গার্মেন্টস সেক্টরকে ‘নিরাপদ কর্মস্থল’-এ পরিণত করার জন্য ফায়ার এন্ড সিভিল সেফটি সমঝোতা স্মারকের ব্যবস্থা নিতে হবে।

    ৫. গার্মেন্টস সেক্টরে সীমাহীন লুটপাট, মুনাফা বন্ধসহ বিদেশী বায়ারদের শ্রম স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে।

    ৬. রানা প্লাজা দুর্ঘটনাসহ দুর্ঘটনা কবলিত গার্মেন্টসের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

    ৭. গার্মেন্টস সেক্টরে বিদেশী ষড়যন্ত্র বন্ধসহ, রানা প্লাজার উদ্ধারকৃত জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।