বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিল রানা প্লাজার শ্রমিকরা

    0
    317

    হেফাজতীদের তাণ্ডবে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার দায়ভার বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে : রাশেদ খান মেননসাভার, ০৭ মে : সাভারের রানা প্লাজার পোশাক কারখানাগুলোর বেঁচে যাওয়া শ্রমিক এবং নিহতের স্বজনেরা বেতনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। পরে জেলা প্রশাসক বিকালে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে ২০ মাইল সেনাবাহিনীর মাঠে চলে যান। সেখানেই আজ বিকাল ৩টায় তাদের বেতন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন।
    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ধসে পড়া রানা প্লাজায় থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, বেতন দেয়া নিয়ে টালবাহানা করছে বিজিএমইএ। গতকাল সোমবার তাদের বেতন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করে আজ বেতন দেয়ার ঘোষণা দেয়া পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠনটি। ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকেরা বেতন নিতে আজ সকালে সাভারের মজিদপুরের ক্যাপিটাল গার্মেন্টসের সামনে যান। সেখানে বিজিএমইএর কোনো কর্মকর্তাকে না পেয়ে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তারা সড়ক অবরোধ করেন। গত তিন মাসসহ অগ্রিম তিন মাসের বেতনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ভবনধসে আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা।
    এ প্রসঙ্গে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক আমিনুর রহমান জানান, আজ মঙ্গলবার বেতন দেয়া হচ্ছে না- এ খবর পেয়ে রানা প্লাজার বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা ধ্বংস্তূপ থেকে মাত্র দুইশ মিটার দূরে রাজ্জাক প্লাজার সামনে অবস্থান নেয়। ফলে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা বলছে, তাদের চার মাসের বেতন দিতে হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা এসে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।  নিউ ওয়েভ বটমসের কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আমাদের এক মাসের বকেয়া বেতন দিয়ে বিদায় করতে চাইছে। কিন্তু আমরা নিয়ম অনুযায়ী লে অফ সুবিধার চার মাসের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও চাই। আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনসের আগুন লাগার পর সেখানে শ্রমিকদের পুরো পাওনাই দেয়া হয়েছিল।
    একই কারখানার ফিনিশিং সেকশনের সুপারভাইজার আরিফ হোসেন বলেন, আহত শ্রমিকদের অনেকেই অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা চালাতে পারছে না। তাদের চিকিৎসার ব্যয়ও কারখানা মালিকদের দিতে হবে।
    শ্রমিকদের এ বিক্ষোভের কারণে সড়কের দুই দিকে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। নিহত শ্রমিকদের ছবি হাতে নিয়ে তাদের স্বজনরাও বিক্ষোভে যোগ দেন। অবরোধের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কেবল এক মাসের বকেয়া বেতনের কথা বললে শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর জেলা প্রশাসক মাইকে ঘোষণা দেন, সাভারের ২০ মাইল সেনাবাহিনীর মাঠে বিকাল ৩টায় শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। শিল্প পুলিশ ও পুলিশর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন। জেলা প্রশাসকের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভকারীরা বেলা সোয়া ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে ২০ মাইল মাঠের দিকে চলে যায়। এর পরপরই যান চলাচল শুরু হয় বলে পরিদর্শক আমিনুর রহমান জানান।
    বিক্ষোভের কারণে সড়কের দুই দিকে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়েছে। এরই মাঝখানে কয়েকশ শ্রমিক বকেয়া মজুরির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। নিহত শ্রমিকদের ছবি হাতে নিয়ে এতে যোগ দিয়েছেন তাদের স্বজনরাও। পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ঠিক পাশেই অবস্থান নিয়ে আছেন, যাতে তারা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের দিকে যেতে না পারেন।   
    আজ ৭ মের মধ্যে রানা প্লাজার কারখানা শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রতিশ্রতি দিলেও গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, শ্রমিকদের পুরো তালিকা হাতে না পাওয়ায় মঙ্গলবার বকেয়া বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে দুটির কর্মীদের তালিকা পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে নিউ ওয়েভ এপারেলসে কর্মীসংখ্যা ১ হাজার ৫৪৩ জন, আর নিউ ওয়েভ বটমসে ৫৯৮ জন। সবগুলো কারখানার তালিকা পেলেই বেতন পরিশোধ করা হবে বলে প্রতিশ্র“তি দেন তিনি।
    গত ২৪ এপ্রিল সাভারে ৯ তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। সকালে রানা প্লাজা ধসে পড়ে, তখনও কারখানাগুলোতে কাজ চলছিল। ভবনটিতে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। ৯ তলা ভবনটির তৃতীয়তলা থেকে ওপরে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ এপারেলস, ফ্যান্টম এপারেলস, ফ্যান্টম ট্যাক ও ইথার টেক্স লিমিটেড নামে পাঁচটি গার্মেন্ট ছিল। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাত শ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। এদিকে উদ্ধার অভিযানের চতুর্দশ দিনে আরো ১৬টি লাশ উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০৫ জনে, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। উদ্ধারকর্মীরা জানান, কংক্রিটের স্তূপ থেকে এখন যেসব লাশ পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই বিকৃত হয়ে গেছে।

    হেফাজতীদের তাণ্ডবে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার দায়ভার বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে : রাশেদ খান মেনন

    হেফাজতীদের তাণ্ডবে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার দায়ভার বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে : রাশেদ খান মেনন
    হেফাজতীদের তাণ্ডবে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার দায়ভার বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে : রাশেদ খান মেনন

    ঢাকা, ০৬ মে : ঢাকায় হেফাজতের অবরোধ শেষে শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে পল্টন-মতিঝিল-বিজয় নগর, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, নয়া পল্টন, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কমরেড রাশেদ খান মেনন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা কিসমত জাহান আকন লাভলু, কামাল চৌধুরি, ডা. দিলীপ রায়, এনামুল হক আবুল, ফারজানা ডলি, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কামরূল আহসান, কিশোর রায়, আবুল হোসাইন, মোস্তফা আলমগীর রতন, রফিকুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।

    মেনন এ সময় বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। তিনি এ সময় ধর্মের নামে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও তাণ্ডবের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান। তিনি জান-মালের নিরাপত্তার জন্য ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকারও অনুরোধ করেন।  

    ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ৬ মে বিকেল ৪.৩০ মিনিট শহীদ আসাদ মিলনায়তনে জরুরি প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন,  আজকে অত্যন্ত দুঃখভরাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে আমি হাজির হয়েছি। আপনারা গতকাল মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবারোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে পল্টন মোড় থেকে শুরু করে মতিঝিল হয়ে ইত্তেফাক মোড় ও অন্যদিকে বিজয় নগর থেকে নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল পর্যন্ত হেফাজতীদের তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছেন। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানের আগে রাত ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত তারা তাদের তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে এবং তারা যখন শাপলা চত্বর ছেড়ে চলে যায় তখনও মতিঝিল শাপলা চত্বরের দু’পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার পাশে রাখা গাড়ি তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি। আপনারা জানেন এ অঞ্চল আমার নির্বাচনী এলাকা। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এই মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় যেমন বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অফিস ও স্থাপনা রয়েছে, তেমনি এই অঞ্চলের রাস্তার দুপাশের বিপুল সংখ্যক হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট ছোট দোকান দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। এখানেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম বিপনী বিতান রয়েছে। আজ সকালে সমস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করে আমি যে দৃশ্য দেখেছি তা ’৭১-এর ঘটনাবলীকেও হার মানায়। এক প্রচণ্ড দানবীয় নৃশংসতা নিয়ে বেলা ১১টায় থেকে হেফাজতে ইসলাম এবং তাদের ছদ্মবরণে জামাত শিবির কর্মীরা প্রথমে পল্টন মোড় ও বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট পরে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট ও গুলিস্তান এলাকায় এক চরম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে। তাদের এই আক্রমণ ছিল পরিপূর্ণভাবে পরিকল্পিত। আজকের সমস্ত ঘটনাবলী দেখে আমার প্রত্যয় জন্মেছে যে, এই তাণ্ডবলীলায় প্রশিক্ষিত বাহিনীই কাজ করেছে। পল্টন মোড় থেকে বিজয় নগর হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত রাস্তার উপর যে গাছগুলো ছিল তা কড়াত দিয়ে কাটা হয়েছে এবং একটা দুটো নয় বেশ কিছু করাতই ছিল। অন্যদিকে পল্টন থেকে শাপলা চত্বর হয়ে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত যে রাস্তার মধ্যেকার আইল্যান্ডে নির্মিত লোহার বেস্টনিগুলোকে একইভাবে প্রশিক্ষিত বাহিনী দ্বারা কেটে ফেলা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি অফিস, মুক্তিভবনের লোহার ক্যাচি গেটটি গ্রোড়ালো বিস্ফোরক দিয়ে এমনভাবে উপড়ানো হয়েছে যে, গেটটি অন্যপারে গিয়ে পড়েছে এবং মুক্তি ভবনের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিস্ট পার্টির অন্য কক্ষগুলোতে গান পাউডার দিয়ে আগুন দেয়া হয়। ঐ ভবনের বিপরীতে র‌্যাংগস ভবনেও একইভাবে আক্রমণ চালানো হয়। ঐ বিল্ডিং-এ অবস্থানরত দৈনিক সকালের খবরের ও পাশে অবস্থিত বাসসের সাংবাদিকরাও আটকা পড়েন। হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেটিং ভবনের নিচ তলায় রাখা সমস্ত গাড়ী ভস্মিভূত করা হয়েছে। তার পাশের ভবন আইডিয়াল প্রডাক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আক্রমণের আর একটি লক্ষ্য ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অফিস কর্মচারিদের বহনকারী বাসসমূহ। কয়েকশত লোক গেট ভেঙ্গে দেয়াল টপকিয়ে ১৮টি বাস ভস্মিভূত করে এবং ২৮টি বাস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মধ্যে ৬টি নতুন বাস ছিল। হেফাজত জামাতের এই বাহিনী ব্রাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙ্গে টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এরকম বেশ কয়েকটি ব্যাংকে হামলা চালায়। তাদের আর একটি লক্ষ্য ছিল বায়তুল মোকাররমের সোনার দোকানগুলো লুট করা। তারা বিভিন্ন সোনার দোকানে আক্রমণ চালায়।

    ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও জরুরি প্রেস ব্রিফিং
    ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও জরুরি প্রেস ব্রিফিং

    কমরেড রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, হেফাজতী জামাত-শিবিরের এই তাণ্ডবের মূল শিকার হয়েছে রাস্তার দু’পাশে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা কার্যত সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। এদেরকে কেন আক্রমণ করা হলো সেটা বোধগোম্য নয়। রাস্তার দু’পাশে কাপড়ের দোকান, বইয়ের দোকান, চশমার দোকান, মনিহারী দোকান, ক্যাসেটের দোকানসহ নানাপ্রকার পশরা সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়েছে। মুক্তিভবনের নিচে ও বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বইয়ের দোকানগুলো বিশেষ করে ইসলামী বইয়ের দোকান থেকে কোরআর শরীফ, হাসিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় বই নিয়ে এসে আগুনে নিক্ষেপ করে। পল্টন মোড় ও বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে গেলে আপনারা এর নিদর্শন দেখতে পাবেন। যে ইসলামের হেফাজতের জন্য তারা এই তাণ্ডব করেছে সেই ইসলামই তাদের হাতে নিগৃহীত হলো। এসব ঘটনাবলীই তার প্রমাণ। বায়তুল মোকাররমের মুসল্লিরাও এসময় নামাজ পড়তে যেতে পারেনি। আসলে ইসলাম নয়, হেফাজত ইসলাম জামাতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই তারা এই তাণ্ডব অনুষ্ঠিত করে।

    কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে, হেফাজত ও জামাতের এই তাণ্ডবে বিরোধী দল সরাসরি সহযোগিতা করেছেন। হেফাজতী জামাতীদের সাথে তাদের কর্মীদের ঘোষণা দিয়ে অংশগ্রহণ ছিল। বিশেষ করে হেফাজতীদের পাশে দাড়ানোর জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার আহ্বানের পরেই এই তাণ্ডব চূড়ান্ত রূপ গ্রহণ করে। এই তাণ্ডবের ফলে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার দায়ভার বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেও গ্রহণ করতে হবে।

    ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা পরিপূর্ণভাবেই রাজনৈতিক দাবি। তাদের এই দাবি মেনে নিলে দেশকে মধ্যযুগীয় পর্যায় নিয়ে যাওয়া হবে। হেফাজতকে কোন প্রকার ছাড় না দেয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার তাদেরকে তাদের কর্মসূচির পালনের সকল প্রকার সহযোগিতা করেছে। এই মোনাফেকরা কত ভয়ংকর হতে পারে গতকালের ঘটনাবলী তার প্রমাণ। বস্তুতঃ জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই তারা এই দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিরোধী দল বিএনপি তাদের সাথে যুক্ত হয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে তাকেই আরও এগিয়ে নিয়েছে। গতকালের ঘটনায় হেফাজত-জামাত-বিএনপি ষড়যন্ত্রের চেহারা এতই স্পষ্ট যে, এখন আর মানুষকে বলে প্রমাণ করতে হবে না। আমরা এই ঘটনাবলীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর পরিচালনা করতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

    রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, হেফাজত-জামাতের এই তাণ্ডবে যে সকল হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হয়েছে তাদের পাশে দাড়ানো প্রয়োজন। এবং সেই লক্ষ্যে তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব বিরোধী দল নেত্রীকেই নিতে হবে। আমি একই সঙ্গে সরকারকেও এই দুঃস্থ মানুষগুলোকে সহযোগিতার জন্য ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আশা করি দেশের মানুষও এইসব মানুষের পাশে দাড়াবে। সবাইকে ধন্যবাদ।

    সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান ও হর্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম।