পৃথক মামলায় ধর্ষক গুরুকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

    0
    238

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,২৯আগস্ট,ডেস্ক নিউজঃ   দু’টি পৃথক মামলায় ধর্ষক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল বিশেষ সিবিআই আদালত। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, দু’টি ধর্ষণ মামলাতেই ১৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও ধার্য করেছেন বিচারক। এর মধ্য থেকে ১৪ লক্ষ টাকা করে পাবেন নির্যাতিতারা। দু’টি সাজাই ধারাবাহিকভাবে লাগু হবে। অর্থাৎ স্বঘোষিত ধর্মগুরুর জেলের মেয়াদ হবে দশ বছর করে মোট ২০ বছর। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে দুই সাধ্বীকে ধর্ষণের দায়ে গত সপ্তাহেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ডেরা সাচা প্রধান। আজ ছিল সাজা ঘোষণার পর্ব। বেলা ২টো ১৬ নাগাদ হেলিকপ্টারে বিশেষ আদালতে পৌঁছান বিচারক জগদীপ সিং। মিনিট দশ করে দুই পক্ষকেই শুনানির সুযোগ দেন সিবিআই বিচারক জগদীপ সিং। ঘড়িতে তখন ২টো ৩৬। দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারক ডেরা সাচা প্রধানকে দু’টি ধর্ষণের মামলায় ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন। সঙ্গে ১৫ লক্ষ টাকা করে দুটি মামলায় মোট ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য হয়।
    রায় ঘোষণার পরেই নিজ বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বৈঠকে ছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা, রাজ্যের মন্ত্রী ও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এদিন সকাল থেকেই টেনশনে ছিল হরিয়ানা ও পাঞ্জাব। গণ্ডগোল এড়াতে রোহতকের সুনারিয়া জেলেই বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। এখানেই গত শুক্রবার থেকে রয়েছেন ৫০ বছরের স্বঘোষিত ধর্মগুরু। শুক্রবার ধর্মগুরু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়িয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন সবমিলিয়ে ৩৮ জন। সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য এদিন সজাগ ছিল সরকার। জেল চত্বরের আশপাশে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবস্থাও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। রোহতকে ২৩ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অতুল কুমার জানান, কেউ যদি হিংসা ছড়াতে চায়, তবে পুলিশ গুলি চালাতে দ্বিধা করবে না। হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করলে সেই ব্যক্তিকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হবে। না শুনলে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছে।

    তিনি বলেন, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি এসেছে, আমরা প্রস্তুত। ডিসি স্পষ্টই বলেন, রোহতকে যে ব্যক্তিই প্রবেশ করবেন, তাঁকে আসার কারণ জিজ্ঞেস করা হবে ও তল্লাশি করা হবে। তল্লাশির সময় যথাযথ পরিচয়পত্র দেখাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হেপাজতে নেওয়া হবে। হরিয়ানা পুলিশের ডিজি বি এস সান্ধু জানান, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই পুলিশের অগ্রাধিকার। রোহতক রেঞ্জের আইজি নভদীপ সিং ভির্ক জানান, কেন্দ্র থেকে ২৩ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া রাজ্য পুলিশের বিশাল বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। সেনা বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনও ডেরা সমর্থককে রোহতকে বা জেল চত্বরের আশপাশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তিনি জানান, রোহতক ও তার আশপাশের শহরে বিশেষ ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোদ্দা কথা, শুক্রবারের পুনরাবৃত্তি যাতে সোমবার না হয়, তার জন্য এদিন প্রথম থেকেই সজাগ ছিল খট্টর সরকার। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ফের যাতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ না পোড়ে, তার জন্য প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হরিয়ানাকে শান্ত রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এমনিতে এখন শুধু সিরসা ছাড়া অন্যত্র কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছে। হিংসার কেন্দ্রভূমি সিরসায় টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক। তবে সিরসায় বিক্ষিপ্ত হিংসার খবর মিলেছে। সাজা ঘোষণার পরে দু’টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ডেরা সমর্থকরা।
    পাঞ্জাব সরকারও ভাতিন্ডা, সাংরুর, মোগা ও পাতিয়ালার মতো ডেরা সমর্থকদের ডেরায় বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। বিশেষ করে পাঞ্জাবে হিংসা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ডেরা সমর্থকরা ‘যুব-ব্রিগেড’ তৈরি করেছে বলে খবর ছড়ানোর পর বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। ডেরা প্রধানের সাজার পরে এবার তাঁর কাজ কারবারে অনৈতিক কিছু রয়েছে কি না বা তাঁর গড়ে অস্ত্র বা বেআইনি অর্থ মজুত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামছে সিবিআই। সঙ্গে খুনের মামলা তো আছেই।সুত্রঃবর্তমান পত্রিকা