আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৮এপ্রিল,আব্দুর রহমান শাহীন-হাকালুকি হাওর থেকে ফিরেঃ বৃষ্টির জলের সাথে মিলে যাচ্ছে হাকালুকি হাওরের তীরবর্তি কৃষকদের চোখের জল। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অনাকিঙ্কত বৃষ্টিপাত ও অকাল বন্যায় এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওরে তলিয়ে গেছে কৃষকদের স্বপ্নের সোনার ধান বোরো । ইতিমধ্যে প্রায় ১৮-২০ হাজার হেক্টর ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফসল হারিয়ে হাহাকার করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই তাদের সামনে। ধান কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটা যাচ্ছে না। ফলে এ বছর কৃষকের ঘরে ফসল উঠবে না।
একফসলি বা বোরো ধান নির্ভর এলাকা হওয়ায় সামনের দিনগুলো কি করে কাটবে- এই ভেবে কৃষকরা দিশেহারা। এই অসময়ের বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে ফসল রক্ষা করা যায়নি, তাই জমির পাশে দাড়িয়ে কৃষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন! বাংলাদেশের কৃষকদের চিরকালই ফসল রক্ষার জন্য বৈরী প্রকৃতির বিরোদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। হাওরা লের কৃষকদের লড়াইটা যেন আরো কঠিন। দেশের মোট আয়তনের ৬ভাগের ১ভাগ হাওরা ল বোরো ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্টের কারণে উঁচু ভূমির আগেই এসব এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায়। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ খরা, বন্যায় বোরো কম-বেশি নষ্ট হয়, কিন্তু এই মৌসুমে কৃষকের যে ক্ষতি হলো তা পোষাতে হিমশিম খাবেন কৃষকরা ।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর তীরের জুড়ী উপজেলায় ৫হাজার ৪শ ৭০হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলায় ৬ হাজার ৪শ ৯০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলায় ৪ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এছাড়া হাওর তীরের সিলেট জেলার ফেচুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় কমপক্ষে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরে পানি বাড়ছে দ্রুত।
সরেজমিনে শুক্র ও শনিবার কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ও জয়চন্ডি ইউনিয়েন এবং জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, হাওরের দু’একটি উঁচু জমি ছাড়া বাকি সবটুকু বোরো ধানের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। হাওর তীরের জায়ফরনগর গ্রামের সায়মন মিয়া (৩৩) বলেন, “১০কেদার জায়গায় ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান লাগিয়েছি, খুব ভালো ফসল হয়েছে কিন্তু ফসল এখনো কাঁচা! হাওরে অসময়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।”
একই গ্রামের খয়রুল ইসলাম (৪০) হাওরে ২১বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন।তন্মধ্যে ১৯বিঘা তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “কষ্টের ফসল তো রক্ষা করতে পারলাম না ! এখন সারা বছর কি খাবো ! ” নিশ্চিন্তপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক হাজী আব্দুল গফফার (৯৫) বলেন, “প্রতি বছর ধান ফাখার বাদে খম-বেশি ফানিয়ে খায় ! ( প্রতি বছর ধান পাকার পর কম-বেশি পানিতে তলিয়ে যায়) কিন্তু ইবার ছইত মাস খাচা ধান ফানিয়ে খাইলাইল, এখন আমরা কিতা খাইতাম (কিন্তু এবারে চৈত্র মাসে কাঁচা ধান পানিয়ে খেয়ে ফেলেছে, এখন আমরা কি খেয়ে বাঁচবো!)।
এলাকাবাসী জানান, কুলাউড়া উপজেলা ভূকশিমইল, বরমচাল, ভাটেরা ও জয়চন্ডি ইউনিয়ন এবং বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, তালিমপুর, বর্ণি ও দাশের বাজার ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকায় আগাম বন্যায় প্রতিদিনই বাড়ছে পানির উচ্চতা। ফলে নিচু ফসলি জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজাহান খবরপত্রকে বলেন, এবছর বাম্পার ফসলের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরা লের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।