“নায়কের তকমা” পেয়েছেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া

    0
    287

    আমার সিলেট  24 ডটকম,৩০অক্টোবরবিশিষ্ট কলামিস্ট সাংবাদিক ও গবেষক লেখক আজহার আলী সরকারের দৃষ্টিতে দুই  নেত্রীর ফোনালাপ  বিশ্লেষণটি যে ভাবে ধরা পড়ে । তিনি তার অনলাইন নতুন দিন ম্যাগাজিনে এ ভাবেই লিখেন……. টেলিফোন আলাপ নিয়ে নাটকের মঞ্চে নিজ নিজ দর্শকের কাছে “নায়কের তকমা” পেয়েছেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। নিজের দর্শকদের কাছে শেখ হাসিনা পেয়েছেন বিনয়ী নায়কের তকমা। অন্যদিকে, খালেদা জিয়া অর্জন করে নিয়েছেন আপোষহীন নায়কের তকমা। সংলাপ নয়, নিজের খুশি মত “নায়কের তকমা” পেতেই টেলিফোনে কথা বলার ঘটনাটিকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করেছেন দুই জোটের দুই নেত্রী ।

    উপরের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখার আগে কতগুলো প্রশ্নের সুরাহা করা যাক, টেলিফোন আলাপকে নাটক বলা কি সঙ্গত হচ্ছে ? একাধিক যুক্তিতে বোঝা যায়, উভয় নেত্রীরই ফোনালাপের সংলাপগুলো ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দু’জনই জানতেন কে, কী লক্ষ্য পূরণ করতে চান। তাই যেখানে ফলাফল ও সংলাপ পূর্বনির্ধারিত থাকে তাকে তো নাটকই বলতে হবে!

    শেখ হাসিনা যে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ফোন দেবেন তা সবাই জানত। তাই, তিনি কী বলবেন তা ঠিক করে নেওয়ার যথেষ্ট সময়-সুযোগ তার ছিল। অন্যদিকে খালেদা জিয়াও অনেক আগে থেকেই জানতেন যে, ফোনে তাকে শেখ হাসিনার সাথে কথা বলতে হবে। তাই, তিনিও ফোনে কী কথা বলবেন, বলবেন না তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে পেরেছিলেন। মনে রাখতে হবে, দু’জনাই একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তুতি ছাড়া “কথা বলার” কোন কারণ দু’জনের কারোরই নাই। সম্ভবত, সর্বশেষ কবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা কথা বলেছেন তার স্মৃতিও দু’জনের কারোরই মনে পড়বে না। তাই, আমরা বলতে পারি, দু’জনই ভেবেচিন্তে কথা বলে নিজেদের “জয়” নিশ্চিত করতে চেয়েছেন এবং আপাত দৃষ্টিতে দু’জনই সফল হয়েছেন।

    ফোনালাপের রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছে শেখ হাসিনা নায়ক আর খালেদা জিয়া খলনায়ক হয়ে ধরা দিয়েছেন। বিএনপির সমর্থকদের কাছে দৃশ্যটি একেবারে উল্টো। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া নায়ক আর শেখ হাসিনা খলনায়ক।
    এবার আরও গভীরে যাওয়া যাক। “অবিশ্বাসী” বিরোধী দল নির্বাচনে না আসলে দৃশ্যত পথ পরিষ্কার হয়ে যায় ক্ষমতাসীন দলের। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে এটা শোভন নয়। তাই, মানুষ দেখতে চাইবে, ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী বিনয়ী হয়ে প্রতিপক্ষকে কাছে টানতে চাইছেন। বিএনপি নির্বাচনে আসছে কি না তা দেখার বিষয় নয়। দর্শক দেখতে চাইবে, ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী সর্বোচ্চ বিনয় দিয়ে বিরোধী দলকে গণতন্ত্রের পথে আগলে রাখতে চাইছেন। শত্রুর জন্যও খাবার নিয়ে বসে আছেন ! এক্ষেত্রে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে হাততালি পেয়েছেন শেখ হাসিনা। মঞ্চে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই করলেন তিনি। পর্দা নামার পর দর্শকরা দেশময় রইরই করে বলে উঠল, ওই দেখ ক্ষমতাসীন দলের”বিনয়ী নায়ক !”

    এবার নজর দেওয়া যাক, মঞ্চের অন্য প্রান্তে। এই প্রান্তে দর্শকরা এ্যাকশনধর্মী চিত্রনাট্য পছন্দ করবেন বেশি। তারা দেখতে বসেছেন, একজন আপোষহীন নেত্রীর কার্যকালাপ। আপোসহীন নেত্রীর সংলাপে তেজ থাকবে, দ্রোহ থাকবে। এ্যাকশন না থাকলে গল্প জমে না। খালেদা জিয়াও কোন ভুল করলেন না। সংলাপের ভাজে ভাজে এ্যাকশন, তেজ ও দ্রোহ সবই ঢুকিয়ে দিলেন। তাই, দর্শকও খুশি, নাটকও হাউজফুল। মঞ্চে পর্দা পরার পর দর্শকরা বলে উঠল, ওই দেখ আমাদের “আপোষহীন নায়ক !” এইভাবে নিজেদের জন্য উপযুক্ত তকমাগুলো উপার্জন করতে দু’জনই সক্ষম হয়েছেন।

    নাটকের চিত্রনাট্য ছেড়ে এবার মঞ্চ ও বিপণন নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। মঞ্চ নির্বাচনে বিবেচনা ছিল একটাই, বিপণন। সরকারের এনক্রিপ্টেড লাল টেলিফোনে কথা বললে রেকর্ড করা ঝামেলা। প্রতিপক্ষ জানে, কথাবার্তা যা হবে সরকার পক্ষ ঠিকই রেকর্ড করবে কিন্তু প্রতিপক্ষ তা করতে পারবে না। করতে গেলে সরকার পক্ষ জেনে গেয়ে শুরুতেই ঝামেলা বাঁধাতে পারে ! কথা রেকর্ড করা না গেলে বিপণন হবে না। তাই, লাল টেলিফোনে কথাও হলো না, কথা হলো মোবাইল ফোনে। কথা রেকর্ডও হলো। কথা হলো, নিজেদের পরিকল্পিত ছক মেনে। সংলাপের ধরণ অনুসারে কণ্ঠস্বরের ওঠানামা মেপে মেপে। নাটক শেষে দু’জনেই যেহেতু সফল তাই বিপননে আপত্তি থাকার কথা না কারোরই। হয়েছেও তাই। দু’ পক্ষই যার যার সুবিধা মতো প্রচার করেছে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে। যদি কোন কারণে পরিস্থিতি বদলে যায়, দু’পক্ষই একে অন্যকে দোষারোপ করবে, সে পথ তো তাদের আগেই করা আছে ! সুত্র,নতুন দিন।