নাসিরপুরে জঙ্গি নিহতঃস্বজনদের খোঁজ দিনাজপুর থেকে

    0
    226

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০২এপ্রিল,ডেস্ক নিউজ,জহিরুল ইসলামঃ মৌলভীবাজারে নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদেরকে নিজের স্বজন দাবি করেছেন দিনাজপুরের এক ব্যক্তি; এই পরিবারটি তিন বছর ধরে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নাসিরপুরে একটি বাড়িতে সাম্প্রতিক অভিযানের পর সাতজনের ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, নিহতদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে।

    দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি করেছেন, নিহত সাতজন তার মেয়ে, জামাতা ও নাতনী। তার বর্ণনা অনুযায়ী নিহতরা হলেন- লোকমান আলী (৪৫), তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার ও তাদের মেয়ে আমেনা খাতুন, সুমাইয়া (১২), মরিয়ম (১০), ফাতেমা (৭) ও খাদিজা (৭ মাস)। কীভাবে নিশ্চিত হলেন- জানতে চাইলে আবু বক্কর গণমাধ্যমেকে জানায়, চারটি শিশু সন্তানের বয়স এবং কয়েকদিন আগে মেয়ের সঙ্গে টেলি কথোপোকথনকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন।

    “প্রায় ৩ বছর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর ২৯ মার্চ রাত ১টার দিকে মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে- ‘বাবা আমাকে মাফ করে দিও, আর কোনোদিন দেখা হবে না’। “তারা কোথায় আছে জানতে চাইলে মেয়ে কাঁপা গলায় বলে-‘এখানে কারো আসার উপায় নেই’। ওই সময় পাশেই জামাই লোকমান আছে বুঝতে পেরে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলেনি।”নাসিরপুরে এক প্রবাসীর বাড়িতে নব্য জেএমবির সদস্যরা আস্তানা গেঁড়েছে খবর পেয়ে পুলিশ গত ২৯ মার্চ ভোরে এলাকা ঘিরে ফেলে।

    আবু বক্করের বক্তব্য অনুযায়ী, সেদিন রাতেই মেয়ের সঙ্গে কথা হয় তার। পরদিন সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সেখানে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, পালানোর পথ না পেয়ে আত্মঘাতী হন ওই বাড়ির বাসিন্দারা। গত বছর গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতায় অনেকে স্বজন-বিচ্ছিন্ন হয়ে সপরিবারে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার খবর মেলে। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরেও পাড়ি জমান।

    আবু বক্কর জানান, গত তিন বছর আগে তার মেয়ে ও নাতনীদের নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় লোকমান। তাদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। এখন মেয়ে ও নাতনীদের লাশ ফেরত চাইলেও জামাতা লোকমানের লাশ নিতে নারাজ তিনি,লোকমান আমার মেয়ে ও নাতনিদের তিন বছর ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে। গত ২৯ মার্চ তাদের হত্যা করে নিজে আত্মহনন করেছে।” লাশগুলো মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। ডিএনএ নমুনাও রেখেছেন চিকিৎসকরা, যাতে অচেনা এই ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। লোকমানের বাড়িও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে।

    মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়। শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আরও আগে থেকে নিজের বাড়ির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিলেন লোকমান। তিন ভাইয়ের মধ্যে লোকমান সবার ছোট। স্থানীয় কৃষ্ণরায়পুর মাদ্রসায় দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন তিনি।

    লোকমানের ছোট বোন নুর বানু বলেন, “২০০২ সালে বিয়ের পর ৭/৮ বছর ভালোই ছিল। এরপর শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও প্রায় আট বছর থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।” গণমাধ্যমে নাসিরপুরে নিহতদের ছবি প্রতিবেশীরা দেখানোর পর এক পুরুষ ব্যক্তিকে নিজের ভাই মনে করছেন নুর বানু। ভাইয়ের লাশও নিতে চাইছেন তিনি। নাসিরপুরে যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল, তার তত্ত্বাবধায়ক পুলিশকে জানিয়েছেন, মাহফুজ নাম জানিয়ে একজন তিন মাস আগে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। প্রতিবেশী আফজাল হোসেন ও ফারুক বলেন, লোকমান ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

    কয়েকবার পুলিশ তার খোঁজে বাড়িতে এলে সে উধাও হয়ে যায়। সাত বছর আগে তার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে আসেননি তিনি। ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বলেন, লোকমানের নামে ঘোড়াঘাট থানায় কোনো মামলা নেই। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মামলা হয় ২০০৮ সালে ২৫ অক্টোবর।