নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক

    0
    292

    আমারসিলেট24ডটকম,২১জানুয়ারীঃ রাজনৈতিক অস্থিরতার পাকে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে ব্যাংকটির আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যয় বেড়েছে ৬৪৩ কোটি টাকার বেশি। বছর শেষে সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে নেতিবাচক আর্থিক সূচকের কারণ হিসাবে ‘হল-মার্ক কেলেঙ্কারি’র পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী প্রতি ৩ মাসে একবার ব্যাংকের ‘সার্বিক পরিস্থিতি’ তুলে ধরে এ ধরনের প্রতিবেদন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য কমেছে ৩২ শতাংশ। ২০১২ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে যেখানে ২৮ হাজার ৭২৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার আমদানি বাণিজ্য হয়েছিল, সেখানে ২০১৩ সালে তা ৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা কমে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে গত বছর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য কমেছে ২৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০১২ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৮ হাজার ৭৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়। ২০১৩ সালে তা ২ হাজার ৪৪০ কোটি ৭৮ লাখ কমে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফাও কমেছে।

    ২০১২ সালের ১ হাজার ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা থেকে এক বছরে কমে হয়েছে ৩১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির ব্যয়  বেড়েছে ৬৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১২ সালে ব্যাংকটির মোট ব্যয়ের পরিমাণ যেখানে ছিল ৪ হাজার ৪২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৫ হাজার ৭১ কোটি ১৭ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় ব্যাংকের কমিশন আয়ে প্রভাব পড়েছে। যার কারণে সুদ বহির্ভূত আয়ও আগের বছরের তুলনায় ৪৬৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা কম হয়েছে। একই সময়ে কমেছে সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিম (কারেন্ট ক্রেডিট); যদিও আমানত বেড়েছে। ২০১২ সালে ব্যাংকটির মোট ঋণ ও অগ্রিম ছিলো ৩৭ হাজার ৮১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যা ২০১৩ সালে কমে ৩৪ হাজার ৩১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা হয়েছে।

    ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ৫৮ হাজার ৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে ৬৬ হাজার ৪৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর্থিক সূচকগুলোর এই পরিস্থিতির ব্যাখায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার এডি শাখায় ২০১২ সালে উদঘাটিত অনিয়মের কারণে মাঠ পর্যায়ে ঋণ বিতরণে অনীহা সৃষ্টি এবং এতে নতুন ঋণ বিতরণে শৈথিল্য দেখা দেয়। এছাড়া বিপিসির ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ একবারে পরিশোধ করায় ঋণ ও অগ্রিম কমে গেছে।

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হোটেল শেরাটন শাখা ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্পোরেট শাখার মাধ্যমে আমদানির কাজ বিপুলভাবে কমে যাওয়ায় এবং খাদ্য ও বিপিসির আমদানি কমে আসায় এলসির মাধ্যমে ব্যাংকের আয়ও কমে গেছে। হোটেল শেরাটন শাখা, নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখা ও বৈদেশিক বাণিজ্য কর্পোরেট শাখায় রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণেও আয় কমেছে। উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের কারণে ব্যাংকের সুদ ব্যয় বেড়েছে। আবার নতুন ঋণ বিতরণ না হওয়া এবং কম সুদে মুদ্রা বাজারে বিনিয়োগ করায় সুদ থেকেও আয় কমেছে। ফলে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কম হয়েছে। তারপরও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছে, বছর শেষে তাদের কোনো প্রভিশন ঘাটতি থাকবে না।
    প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটি সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখা থেকে বিভিন্ন কৌশলে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়। যার বিপরীতে উল্লেখ করার মত কোনো জামানত রাখা হয়নি। এই অর্থের পুরোটাই এখনও খেলাপী অবস্থায় অনাদায়ী রয়েছে।