নবীগঞ্জে মহিলা মেম্বারকে উত্যক্ত ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ

0
484
নবীগঞ্জে মহিলা মেম্বারকে উত্যক্ত ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ
দীঘলবাক ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার রেবা রানী

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ দীঘলবাক ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার রেবা রানী কে উত্যক্ত ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগে দুই পুরুষ মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া ঐ মহিলা মেম্বার থানায় অভিযোগ দেওয়ার আগে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। মহিলা মেম্বারকে জুতাপেটা করার জন্য দুই পুরুষ
মেম্বাররা ধাওয়ার ঘটনা ও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদ এর (সংরক্ষিত) ৪,৫,৬,নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার রেবা রানী সরকার গত ১জুন পরিষদে আসলে ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জুল হোসেন ও ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: সোহান মিয়া রেবা রানী সরকার কে প্রতিদিনের ন্যায় অশালীন কথা বার্তা বলে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এসময় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন সহ জোর পূর্বক তাকে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টাকালে মহিলা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে, দুই মেম্বার রেবা রানীকে জুতা হাতে নিয়ে পেটানোর জন্য ধাওয়া করলে রেবা রানী,পরিষদ থেকে দৌড়ে চেয়ারম্যনের বাড়িতে যান।

এসময় তারা বলে শালার বেটিকে ধরে ৫শ জুতার বারি (জুতাপেটা) করার দরকার। পরে তিনি চেয়ারম্যন কে না পেয়ে নিরাপত্তার জন্য এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দেয়ার পরে মেম্বার রেবা রানী কে টেলিফোনে ও রাতে বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে প্রান নাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে।

এর পর মহিলা মেম্বার রেবা রানী ভয়ে, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে গত ৫ জুন অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি তার শ্লীরতাহানির কথা উল্লেখ করেন এবং নিরাপত্তা চান। অভিযোগ আমলে নিয়ে ওসি ডালিম আহমদ তদন্ত করার নির্দেশ দেন। ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আবু বক্করকে।
উক্ত অভিযোগের তদন্ত করতে মাঠে নামে পুলিশ তারপরই নড়ে চড়ে বসে দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদ। তদন্তের প্রেক্ষিতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া রাতারাতি মিটিং ডাকেন গত ৯জুন তারিখে সকল মেম্বারদের উপস্থিতিতে বাদী বিবাদীর বক্তব্য শোনেন চেয়ারম্যান তিনি।
রেবা রানী কান্না জড়িত কন্ঠে জবানবন্দিতে তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা করেন। চেয়ারম্যান সাহেব ন্যায় বিচারের আশ্বাসে বিষয়টি সত্য কি না জিজ্জাসা করিলে বিবাদীগন বাদীর সম্পুর্ন বিষয় স্বীকার করেন। তখন তারা এমন কাজ আর করবে না বলে মৌখিক ভাবে চেয়ারম্যানের নিকট ওয়াদা করেন।

এসময় বাদী রেবা রানী বলেন আমি যেহেতু ইউএনও এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। তাই তিনি লিখিত ভাবে মীমাংসা চান এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত ডকুমেন্ট চান। তিনি বলেন আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলা আমার ভবিষ্যত নিরাপত্তার প্রয়োজন। তখনই পরিষদের মধ্যে এলোমেলো বক্তব্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তখন চেয়ারম্যান সভা মুলতবি করেন।
এবিষয়ে রেবা রানী বলেন,”আমি খুবই আতংকের মধ্যে আছি। আসামীরা আমাকে হুমকি দামকি দিয়ে আসছে ঘটনাটি তারাতারি শেষ করার জন্য।দুই মেম্বার আমাকে পরিষদে জুতা হাতে নিয়ে ধাওয়া করে। বলে আমাকে ৫শ জুতার বারি (জুতাপেটা) করা হবে বলে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার প্রশাসন এর কাছে চাই।”

দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার তোফাজ্জুল হোসেন ও সোহান আহমদ এর কাছে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, “আমরা ঐ নষ্ট মহিলাকে জুতাপেটার হুমকি দেইনি। সে আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দ্যেশ্যমুলক অভিযোগ তুলেছে। বিষয়টি চেয়ারম্যান সাব আপোষে মীমাংসা করে দিবেন বলেছেন।”
ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আবু বক্কর মামলাটি তদন্ত করেন, তিনি বলেন “আমরা প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। মহিলাটি অসহায় এটি আপোষে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।”
দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া বলেন, “আমি পরিষদে ছিলাম না, মেম্বাররা কথা কাটাকাটি করেছে। বিষয়টি আমি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, “আমরা ঘটনাটির ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”