নবীগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি

0
261
নবীগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি
নবীগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করতে যাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ জুন) রাত থেকে কুশিয়ারা ডাইক উপছে পানি প্রবেশ করছে। ইনাতগঞ্জ কসবা রাস্তায় প্রায় ৩ ফুট উপর দিয়ে দ্রুত বেগে পানি ঢুকছে।

এছাড়া আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউনিয়নের কৈয়ার বিলের বাধঁ ভেঙ্গে দ্রুত পানি প্রবেশ করছে। শনিবার বিকালের দিকে বাল্লা জগন্নাথপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে রাস্তা ভেঙ্গে বিবিয়ানা নদীর পানি প্রবেশ করছে।

ছবি প্রতিবেদক।

উক্ত পানি প্রবেশের কারনে রাতের মধ্যেই কয়েক শতাধিক পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র ভয়াবহ বন্যার আশংখ্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ সভা করে গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বালি ভর্তি বস্তা দিয়েও ডাইকের পানি নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না। বিভিন্ন প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাড়ছে পানি। উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে পানি ঢুকে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাট।

ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের উমরপুর, মোস্তফাপুর, দক্ষিণ, গ্রাম, প্রজাতপুর, লালাপুর, কইখাই, লতিবপুর, তপথিবাগ, মনসুরপুর, আগনা, নোয়াগাঁও, বাউর কাপন, রমজানপুর, ইনাতগঞ্জ বাজারসহ ৩০/৩৫ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ইনাতগঞ্জ-সৈয়দপুর সড়কের মোস্তফাপুর থেকে পাঠানহাটি পর্যন্ত রাস্তায় বুক পানি রয়েছে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল না করায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী দীঘলবাক ইউনিয়নের গালিমপুর, মাধবপুর, আহমদপুর, মথুরাপুর, কসবা, দীঘলবাক, জামারগাওসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে উঠেছে পানি।

গালিমপুর ও মাধবপুর স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানকার জনজীবন হুমকীর মূখে রয়েছে। উপজেলার সকল হাওরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

ইতিমধ্যে শুক্রবার রাত থেকে শেরপুর থেকে ইনাতগঞ্জ পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপছে পানি প্রবেশ করছে। ফাদুল্লা ও জামারগাও এলাকায় নতুন ডাইক দিয়েও পানি প্রবেশ করছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এদিকে আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউপির কৈয়ার বিলের বাধঁ ভেঙ্গে দ্রুত বেগে পানি প্রবেশ করছে। এতে উপজেলার ১নং ইউনিয়ন বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সাধারন মানুষ।

ফলে উপজেলার সর্বত্র ভয়াবহ বন্যার আশংকা করছেন সর্ব মহল। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন বলেছেন, ইনাতগঞ্জের কসবা এলাকায় এলজিইডি রাস্তায় প্রায় ৩ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। কুশিয়ারা ডাইক এখন ভাঙ্গেনি, তবে ডাইক উপছে পানি প্রবেশ করছে।

ইতিমধ্যে ১৩ টি আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হাইস্কুল, প্রাইমারীস্কুল, কলেজ গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দীঘলবাক ইউনিয়নের গালিমপুর, মাধবপুর বন্যার্তদের মাঝে সরকারী ভাবে ত্রান পৌছানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সকলকে সর্তকতার সহিত মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর প্রকৌশলী মিনহাজ আহমদ শোভন বলেছেন, নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর, পারকুল গ্রামে কিছু স্পটে বাঁধের প্রায় ১ ফুট উপর দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। পানি দ্রুত বেড়েই চলেছে। যেভাবে পানি বাড়ছে বস্তা দিয়ে আটকানো হয়তো সম্ভব হবে না। যে কোন সময় সিপেজ হয়ে বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। এর মাঝে খোলা জায়গায় একটার পর একটা বজ্রপাত হচ্ছে। তবে তারা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া উমরপুর গ্রামের ফয়ছল মিয়া জানান, তার ঘরে বুক পানি। শুধু তার একা না। এমন দৃশ্য সবার ঘরে। তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

আখলিছ মিয়া জানান, গরু এবং ছাগল নিয়ে তিনি বিপাকে। ব্যবসায়ী মিল্টন মিয়া জানান, সকাল ১১ টায় ইনাতগঞ্জ বাজারে পানি ছিলনা। বেলা ১২ টার পরে ইনাতগঞ্জ বাজারে পানি প্রবেশ করেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে তিনি জানান। উপজেলার বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক গৌতম দাশ জানান, জগন্নাথপুর এলাকায় বিবিয়ানা নদীর পানি যে হারে প্রবেশ করছে, আজ রাতের মধ্যেই কমপক্ষে ২/৩ শতাধিক পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে।

তারা স্থানীয় ভাবে ওই সব পরিবার গুলোসহ তাদের গবাধি পশু সরিয়ে জগন্নাথপুর স্কুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।