নওগাঁ-আত্রাই’য়ে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি,আঞ্চলিক সড়ক

    0
    273

    যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা, এলাকাবাসি আতঙ্কে

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৯আগস্ট,নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই, (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও অবিরাম বর্ষণের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ-আত্রাই আ লিক সড়কের মিরাপুর, মির্জাপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর ও সদুপুর নামক স্থানের বেশ কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায় যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাটলের সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবাদুর রহমান ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন স্তারের সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এ সড়ক পরিদর্শন করেছেন এবং সড়কটি রক্ষায় জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

    এদিকে সড়কে ফাটল দেখা দেয়ায় এলাকাবাসিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকার হাজার হাজার জনগন তাদের আবাদি ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেলেও তাদের শেষ সম্বল বসতবাড়ি টুকু নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।
    স্থানীয়দের অভিযোগ যুগ যুগ আগে নির্মিত আত্রাই-নওগাঁ আ লিক সড়কে এ পর্যন্ত কোন সংস্কার কাজ না করার ফলে প্রতি বছরই এ সড়ক ভেঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল, ঘর বাড়ি, রাস্তা ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
    সরেজমিনে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানিপুর, মির্জাপুর, রসুলপুর, হাটকালুপাড়া এলাকায় আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীর মোহনা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই মুহূর্তের মধ্যে ভয়াঙ্কর রূপ ধারন করে। গত কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি হুহু করে বেড়ে বিপদসীমার উপড় দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে একদিকে নদী এলাকার শত শত জনবসতি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

    অপরদিকে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পরিবার পরিজন ও গবাদী পশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। চারদিক জলাবদ্ধতার কারনে কোন কাজকর্ম করতে না পারায় চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে গত সোমবার উপজেলার মালিপকুর নামক স্থানে আত্রাই-সড়ক ভাঙ্গার সাথে সাথে সিংড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে রোগবালায় খাদ্য ও ঔষধ সঙ্কট।
    ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী রানীনগর উপজেলার মাল ী ও ঘোষগ্রামের তিনটি স্থানে ভাঙ্গার ফলে নওগাঁ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং প্রবলবেগে যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে শাহাগোলা ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বন্যার ফলে উপজেলার শাহাগোলা, কালিকাপুর, আহসানগঞ্জ, পাঁচুপুর, হাটকালুপাড়া ও মনিয়ারী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামের, ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চলতি রোপা আমন ধান থৈ থৈ পানিতে ভাসছে। সাথে সাথে শতাধিক মাছ চাষির পকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার অর্ধশত স্কুল ডুবে যাওয়ায় ওই সকল স্কুলে লেখাপড়া কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
    এবিষয়ে ১নং শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, আত্রাই-নওগাঁ আ লিক সড়ক খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং এ সড়ক রক্ষায় আমরা সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি সড়ক রক্ষায় আমরা সক্ষম হবো।
    এব্যাপারে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী শ্রীঃ দিনেশ কুমার পাল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সেই সাথে বানভাসি পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখন আত্রাই-নওগাঁ আ লিক সড়কটি রক্ষা না করতে পাড়লে এ এলাকার মানুষের শেষ সম্বল ঘর-বাড়ি টুকুও রক্ষা পাবে না।
    এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার মিরাপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর ও সদুপুর স্থান গুলো ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদের ভিত্তিতে পরিদর্শণ করা হয়েছে। বানভাসী মানুষদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেই সাথে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
    এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আত্রাই উপজেলার বন্যার্ত বানভাসী মানুষের মাঝে যে পরিমান ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন অসহায় বানভাসী মানুষেরা।#