দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যার বিচার

    0
    551

    ঢাকার দ্বিতীয় বিশেষ জজ আদালতে চলমান মামলাটি দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যার বিচার। মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে না।

    জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার নিজ বাসা থেকে হেঁটে ২ মিনিট পথের দূরত্বে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব।

    এ মামলার ১৯ জন সাক্ষী। তবু ১৬ বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার। ১৬ বছরে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।

    ২০১১ সালের ১৯ মে মামলাটি ঢাকার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ঢাকার দ্বিতীয় বিশেষ জজ আদালতে বদলি হয়ে আসার পর গত ২ বছরে স্থবির হয়ে পড়েছে আলোচিত এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম।

    এ মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। বাকি ১৯ আসামি হচ্ছেন,  যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, নবী সোলায়মান, দুলাল ওরফে আব্দুস সাত্তার, এস এম রাকিবুজ্জামান রাকিব, মানিক, বাদশা ওরফে বদিউজ্জামান, আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টার, শফিকুল আলম ফিরোজ, আজিজুর রহমান ওরফে কুত্তাচোরা লিটন, আরমান, ইমাম বাবু, আবু তাহের সিদ্দিক, এহসানুল হক রুবেল, শাহীন, দেলোয়ার হোসেন দেলু, সাদেকুল ইসলাম সাগর, ল্যাংড়া মাসুদ ও স্বপন।

    আসামিদের মধ্যে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, নবী সোলায়মান, বাদশা ওরফে বদিউজ্জামান, মানিক ও এহসানুল হক রুবেল জামিনে আছেন।
    কারাগারে আটক আছেন সুইডেন আসলাম, কুত্তাচোরা লিটন, শাহিন ও আরমান। এ ৪ আসামি ১৬ বছর ধরেই কারাগারে আটক আছেন।

    আসামি ওয়াদুদ মাস্টার মারা গেছেন। বাকি ৯ আসামি পলাতক আছেন।

    গালিব হত্যার ঘটনায় ওই দিনই তেজগাঁও থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা।
    মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের প্রতিবাদ সভা ছিল। গালিব তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওই সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে তেজকুনিপাড়ার বাসা থেকে বের হন। স্বামীকে বিদায় দিয়ে দোতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শম্পা।
    বাদিনী তার মামলার বলেন, ‘‘গালিব বের হওয়ার ২ মিনিট পরই ২/৩টা গুলির শব্দ পাই। ঘটনার পরপরই আমার বাসার সামনে দিয়ে ৮/১০ জন লোক পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র হাতে দ্রæত দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার ভাইকে পাঠাই গালিবের খোঁজ নেওয়ার জন্য। সে দ্রæত ফিরে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে, দুষ্কৃতিকারীরা দুলাভাইকে গুলি করেছে। মানুষ ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিচ্ছেন।’’

    ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    এ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি শাহীন ১৯৯৭ সালের ২১ আগষ্ট ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

    জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘‘গালিবের সঙ্গে কাওরানবাজারের হাটের টাকা নিয়ে লেংড়া মাসুদের তর্কাতর্কি হয়। গালিব কাউকে ভাগ না দিয়ে ৫ লাখ টাকায় নিয়ে যান। আসলাম ভাইয়ের কাছে এর বিচার আসে। আসলাম ভাই বলেন, ঠিক আছে এর কঠোর বিচার হবে।’’

    শাহীন আরও বলেন, ‘‘আমরা সবাই আওলাদ মার্কেটে যাই। ওরা ভেতরে ঢোকে। দেলু ও মাসুদও ভেতরে ঢুকে। আমি ও আসলাম ভাই মেইন রোডে থাকি। দেলু ও মাসুদ গুলি করে। আসলাম ভাইও গুলি চালায়। আমিও গুলি চালাই। তবে আমার গুলি লাগেনি। গালিব পড়ে গেলে আমরা সবাই দৌঁড়ে পালাই।’’

    এ মামলায় সুইডেন আসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয় ১৯৯৭ সালের ২৯ মে। তিনি অন্য একটি অস্ত্র মামলায় তখন কারাগারে আটক ছিলেন।

    মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান ডিবি’র পরিদর্শক এসএ নেওয়াজী। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৯ সালের ৮ এপ্রিল ২০ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

    চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব ঘটনার দিন ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য তার রাজধানীর ফার্মগেটের ৯৬, তেজকুনিপাড়ার নিজ বাসা থেকে বের হন।

    এরপর তেজকুনিপাড়ার ১০০ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাসার প্রধান গেটের সামনে রাস্তায় এলে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মারা যান।

    ২০০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন।

    এরপর দীর্ঘ ১২টি বছর মামলাটির বিচার চলে ওই আদালতে। ওই সময় ১২ বছরে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করতে সমর্থ হন আদালত।

    ২০১১ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকার দ্বিতীয় বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হককে।