তালের পিঠার জামাই আদর আর কন্যাবরণ আজ শুধু স্মৃতি

    0
    275

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১১মে,ফারুক মিয়া, চুনারুঘাট থেকেঃ কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রাম ঐতিহ্য, বাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুই সারি সারি তালগাছ সেই আদিকাল থেকেই গ্রাম-বাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিমভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে। সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মনও জুড়াতো। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এবং শোভা বৃদ্দিতে যে তালগাছে জুড়ি মেলেনা সেই তালগাছ আজ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। নিকট অতীতেও যে তালগাছ শোভা ছড়াতো গ্রাম বাংলায় আর ভারসাম্য রক্ষা করতো প্রকৃতির সেই তালগাছ নিকট ভবিষ্যতে তা আর তেমন চোখে পড়বেনা বলে মনে করছেন প্রবীন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে নানান পদক্ষেপ রক্ষায় তেমন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এটি বিলীন হতে চলেছে।

    এক সময় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের আনাচে কানাচে এবং বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতো। কিন্তু সেই দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। এখন হঠাৎ কোন গ্রামে ঝোপ জঙ্গলে দু-একটি তালগাছ চোখে পড়ে। এগুলো আবার কারো লাগানো নয়, এমনিতেই এসব তালগাছ ঝোপ জঙ্গলে বেড়ে উঠেছে। অতীতে অপরিচিত মানুষদের বাড়ী, জমি, পুকুর-মাঠ, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর ক্ষেত্রে তাল গাছ নির্দেশক হিসেবে কাজ করতো। এমনকি সরকারী বেসরকারী কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তাল গাছের সহায়তা নেয়া হতো। তালের পিঠা, তালের গুড়, তালের আঁটি ও তালের রস সবার প্রিয়।

    বিশেষ করে তালের পিঠা দিয়েই অতীতে জামাই বাড়ী, মেয়ের বাড়ী, বেয়াইর বাড়ী, শ্বশুর বাড়ীসহ নানা আত্মীয়তার বন্ধন রচিত হত। সে সময় তালের পিঠা ছাড়া গ্রাম-গঞ্জে আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেতনা। এছাড়া তালগাছের পাতায় তৈরী করা হয় নানা ডিজাইনের হাত পাখা। কিন্তু গ্রাম-বাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার গ্রামীন পরিবারগুলোতে সেই তালপিঠার আত্মীয়তা, জামাই আদর আর কন্যা বরন চোখে পড়েনা। তালগাছের এসব ঐতিহ্যগত দিক ছাড়াও গাছের গুল দিয়ে কাঁটা ও পাকা ঘরের তালার (ছাদ) তীর করা হয়ে থাকে।

    ঘরের তালায় বাঁশের তীরের চেয়ে তালগাছের তীর অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তালগাছের এসব উপকারীতা ও ঐতিহ্যগত দিক ছাড়াও গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের বহুমূখী কাজে লাগে তালগাছ কিন্তু অযতœ, অবহেলা ও গুরুত্বের অভাবে তালগাছ এখন হারিয়ে যাচ্ছে।