তথ্য বাতায়ন মৌলভীবাজারে তথ্য ঘাটতি ও অসঙ্গতি

    0
    339

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৪জানুয়ারী,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন -২০২১ কে সামনে রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগনের দোর গোড়ায় সহজে সঠিক ও সর্বশেষ তথ্য সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে চালু হয় বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল জাতীয় তথ্য বাতায়ন (নধহমষধফবংয.মড়া.নফ)। এটি সরকারের অন্যতম ই-গভর্নেন্স উদ্যোগ।

    ইন্টারনেট ব্যবহার করে জনগণ এ তথ্যভান্ডার থেকে সরকারের ৫৮ টি মন্ত্রণালয়, ৩৫৩ টি অধিদপ্তর, ৮ টি বিভাগের ৪৯১টি উপজেলার ৪৫৫৪ টি ইউনিয়নের সমস্ত তথ্য জনগণ যাতে পায় ও সুফল ভোগ করতে পারে সে জন্যই এই উদ্যোগ।

    কিন্তু উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার এবং তথ্যপ্রদানে অনাগ্রহের প্রথাগত অভ্যাসের কারনে মৌলভীবাজার জেলার ৭ টি উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে রয়ে গেছে তথ্য ঘাটতি। অনন্য এ পোর্টালের সুবিধার বদলে তথ্য বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে তথ্য ও সেবা গ্রহনকারীদের, নেই পর্যাপ্ত সঠিক ও সর্বশেষ তথ্য সন্নিবেশ, নিয়মিত হালনাগাদ কার্যক্রম। দীর্ঘদিন আগে আপলোড করা নামমাত্র তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর উপাত্ত দিয়েই চলছে জেলার তথ্য বাতায়নগুলো। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যখন এগিয়ে চলছে দেশ, তখনই যেন থেমে আছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারী দপ্তরের তথ্যবাতায়নগুলো।

    স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, উদ্ভাবনী ও জনমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সরকার ও নাগরিকের মধ্যকার সেতুবন্ধনের লক্ষেই এ বাতায়নের যাত্রা। কিন্তু সমাজের সচেতন মহল, তরুন-তরুণী উপকার প্রত্যাশীসহ জনগণ প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা প্রাপ্তি থেকে বি ত হচ্ছেন শুধুমাত্র বিভিন্ন দপ্তরের এ বিষয়ে তথ্য প্রদানের ব্যাপারে উদাসীনতার কারনে ।

    জানা যায়, ওয়ান স্টপ অনলাইন পোর্টাল হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের এই ওয়েব পোর্টাল সরকারি সেবাসমুহের সর্বশেষ তথ্য প্রদান করার লক্ষ্য নিয়ে চালু করা হয়ে থাকলেও গত ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারী দপ্তরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে বিভিন্ন অসংঙ্গতি, তথ্যঘাটতি, অপ্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, পুরানো তথ্য দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে জেলার সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও উদাসীনতাই মুখ্য কারন। তথ্য ঘাটতি সম্পর্কে উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিবরা পরস্পরবিরোধি কথা বলেন। কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদেরকে তথ্য-উপাত্তের হার্ড বা সফটকপি না দিলে বাতায়নে আপলোড দিতে পারিনা। ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ বা সরকারী কার্যক্রম পোর্টালে আসে না।’

    মাঠ পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার খ্যাত এ সমন্বিত ওয়েব পোর্টাল ঘেঁটে যা পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, উপজেলার সরকারী প্রতিষ্টান সমুহের, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব পাতায় সুবিধাভোগীদের তালিকা ভিজিএফ, অতিদরিদ্রদের নামের তালিকা, ভিজিডি, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি, হতদরিদ্রের তালিকা, মহিলা বিষয়ক মাতৃত্বকালীন ভাতা, সমাজসেবা বিষয়ক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, বিআরডিবি, প্রবাসীদের তালিকা, বিদ্যালয়ের নাম, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, হাটবাজারের তালিকা, পূর্বতন ও বর্তমান চেয়ারম্যানের তালিকা, সদস্যগণের তালিকা, গ্রাম পুলিশদের তালিকা, কোন গ্রামে কত লোক সংখ্যার তালিকা সহ আরও তথ্য থাকার কথা। কিন্তু জেলার দু’একটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ব্যাতীত অন্য সব ইউনিয়ন ও প্রতিষ্ঠানের পুর্ণাঙ্গ তথ্য বাতায়নের স্ব স্ব দপ্তরের পাতায় নেই এবং ভাতা ভোগিদের তথ্যে মারাত্বক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

    ৩০/১২/২০১৭ ইং তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, উপজেলার  সব ইউনিয়ন ও প্রতিষ্ঠানের পুর্ণাঙ্গ তথ্য নীড়পাতায় নেই এবং এসবের কোন তথ্য হালনাগাদ করা নেই এবং ভাতা ভোগিদের তথ্যে মারাত্বক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। মির্জাপুর ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতাভোগিদের নাম আছে  কিন্তু এতে দেখা যায়, ২৭ জন বয়স্ক ভাতাভোগিদের ১৪ জনেরই পরিচয়ে মারাত্বক অসঙ্গতি। হিন্দু লোকের পিতা হিসেবে ইসলাম, ইসলাম ধর্মের লোকের পিতার নাম হিন্দু হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে! এছাড়াও, বর্তমান চেয়ারম্যানের তালিকা হালনাগাদকৃত নয়, পুর্বতন চেয়ারম্যানদের যে নাম গুলো রয়েছে (শাহ আলম সরকার, তৈয়ব আলী, মো. মাজেদুল ইসলাম সরকার, কফিল উদ্দিন)  এরা কখনোই এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন না।

    অন্য অঞ্চলের ইউনিয়নের প বার্ষিকী পরিকল্পনা মির্জাপুর ইউনিয়নে কপি – পেষ্ট করে দেওয়া আছে। যেখানে অন্য উপজেলার গ্রামের নাম আছে।এ বিষয়গুলো স্বীকার করেছেন ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান। হাটবাজারের তালিকায় যেগুলো দেওয়া আছে এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। এছাড়া, যতগুলো চ্যাপ্টার এ (লিঙ্ককৃত) তথ্য থাকার কথা, সেগুলোর অনেকখানি খালি। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, যেহেতু পোর্টালের প্রতিটি পাতায় সামাজিক যোগাযোগ লিঙ্ক রয়েছে, বিভ্রান্তিমুলক তথ্য সমৃদ্ধ পাতা শেয়ার করলে জনমনে ভুল বার্তা যাবে। এ দিয়ে ঘরে ঘরে দেশব্যাপী সরকারের কর্মকান্ডের বিবরণ পৌঁছানো যেত। এরুপ একটি অনন্য উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ের উদাসীনতা, পুরোনো প্রথা নির্ভর থেকে আইসিটিতে অনাগ্রহীতার জন্য ভেস্তে যেতে পারে না।

    শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউপি সচিব নারায়ন গোস্বামী বয়স্কভাতা তালিকায় মারাত্বক অসঙ্গতি ও তথ্যের অপ্রতুলতা সম্পর্কে বলেন, ‘যদি এরুপ হয়ে থাকে তাহলে মারাত্বক ভুল হয়েছে।’ তবে এরুপ ভুল মেনে নেওয়া যায়না বলেও তিনি মন্তব্য করেন এবং এ ব্যাপারে দেখে আশু ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

    মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি এখনো দেখিনি, তবে আপনার কাছ থেকে পুর্বতন চেয়ারম্যানদের নাম শুনে মনে হয়েছে এতে ভুল তথ্য রয়েছে। এরুপ কোন চেয়ারম্যান এ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করেননি। আমি সচিবের ও উদ্যোক্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

    শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী প্রোগ্রামার মোহাম্মদ সাজেদুল হাসান বলেন, প্রত্যেক দপ্তরের তাদের নিজেদেরই তথ্য আপডেট করার কথা, আমরা শিখিয়ে দিচ্ছি ও তাদেরকে হালনাগাদ করার তাগিদ দিচ্ছি। এটুআই’র (একসেস টু ইনফরমেশন) তৈরীকৃত চ্যাপ্টার ইতিমধ্যে দিয়ে দেয়া আছে। কারিগরী ত্রুটি ব্যাতীত তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম স্ব স্ব কার্যালয় দেখবে। আমার জানামত কারিগরী কোন ত্রুটি নেই।

    ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এরিয়া ম্যানেজার পারভেজ কৈরী জানান, সরকার, প্রশাসন ও তথ্য কমিশন তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য পুুরোপুরি মাঠে নেমে গেছে। এ ক্ষেত্রে সুফল পেতে হলে তরুনদের মধ্যে জনসচেতনতা ও সংবাদপত্রের ভূমিকা খুবই জরুরী।

    মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, সম্প্রতি পুরো জেলায় উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে আশানুরুপ বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হবে।

    এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জনগণকে সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্যসেবা প্রদানের জন্যই তথ্য বাতায়ন। সরকার সেটার বাস্তবায়ন চায়, জনগণ সুফল পেতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ কার্যার্থে ও ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনিক নির্দেশনা ও বলে দেব’।

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই বিভাগের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট মো. আশরাফুল আমিন জানান, মন্ত্রীপরিষদ থেকে জেলা পর্যায়ে বাজেট ছাড় করা হয়েছে, এ পরিপ্রে্িক্ষতে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জেলাপ্রশাসক ও ইউএনওদের জানিয়ে দিয়েছি এবং আবারো চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ০১ (এক) মাসের মধ্যে এর দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হবে। সাধারণত উদ্যোক্তা ইউএনওদের তত্বাবধানে থাকেন ও ইউএনওদের পুরো উপজেলার অগ্রাধিকারযোগ্য দায়িত্ব¡। নিজেদের কার্যালয় থেকে তথ্য তালিকা নিয়ে খুব সহজে আপলোড ও তথ্য হালনাগাদ করা যায়। এগুলো,তাছাড়া, বাতায়নে নিজেদের দপ্তরের কার্যাবলী আপলোড করা ও দেখভাল করার দায়িত্ব ঐ দপ্তরের, স্ব স্ব অফিসের।

    মৌলভীবাজার জেলাবাসী মনে করেন তথ্য বাতায়নে সঠিকভাবে তথ্য লিপিবদ্ধ করলে জনগন ও প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিশে^র যেকোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত হবে এবং নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।