ঢাকার অদূরে সাভারে নয়তলা ভবন ধসে নিহত ৮০ : সহস্রাধিক হতাহতের আশঙ্কা

    0
    413

    ঢাকা, ২৪ এপ্রিল : রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের নয়তলা একটি ভবন ধসে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৮০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সহস্রাধিক লোক হতাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে আট শতাধিক লোককে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে প্রায় ৪০০জনকে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, বেলা দুপুর ১টা পর্যন্ত এ হাসপাতালের মর্গে দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ৬০ জনের লাশ রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন) ভরত চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এখান থেকে তার উপস্থিতিতেই বেশ কয়েক জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী। আর এ পর্যন্ত অসংখ্য লোককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধার তৎপরাতায় সর্বোচ শক্তি বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানন, স্থানীয় এমপি মুরাদ জং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছেন।

    ঢাকার অদূরে সাভারে নয়তলা ভবন ধসে নিহত ৮০ : সহস্রাধিক হতাহতের আশঙ্কা
    ঢাকার অদূরে সাভারে নয়তলা ভবন ধসে নিহত ৮০ : সহস্রাধিক হতাহতের আশঙ্কা

    এদিকে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাভারে ৯তলা ভবন ধসের মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আবদুল হামিদ ভবনের ভেতর আটকে পড়া শ্রমিকদের বাঁচাতে সর্বাত্মক উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাবার এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
    ভবন সংশ্লিষ্টদের হিসাবে, ভবনটিতে অবস্থিত কয়েকটি গার্মেন্টসের সব মিলিয়ে সাড়ে ছ’হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। ধসে পড়ার সময় ছিলো উৎপাদনের পিক আওয়ার। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জোনের এডিসি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সেনাবাহিনী, দমকলের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে দুর্ঘটনা এতো ব্যাপক যে সর্ব সাধারণের সহযোগিতা ছাড়া ভালোভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। ওই ভবনে বিপণিকেন্দ্র, পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল। এ কারণে ধসে পড়ার সময় ভবনটিতে বহু মানুষ ছিল বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে।
    সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি বলেন, ভবনের কয়েকটি তলায় পোশাক কারখানাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ছিল। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে। বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবনটির ৭তম ও ৮ম তলার ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেডের সুইং ফ্লোরের লাইনম্যান সামিউল ইসলাম জানান, ভবনটির ৭তম ও ৮ম তলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করতো। ৩য় ও চতুর্থ তলায় ফ্যানটম টেক্সট লিমিটেডে কাজ করতো আরো দেড় হাজার শ্রমিক। আর ৭ম তলার ইথারপেক ফ্যাশনে কাজ করতে ছয় শ’এর মতো। সব মিলিয়ে তাই শত শত শ্রমিক হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
    ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, সকাল নয়টা সাত মিনিটে তারা সাভারে ভবন ধসে পড়ার খবর জানতে পারে। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক স্থানীয় লোক উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে। ওই ভবন থেকে শত শত আহত মানুষকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভবনটির সামনে গড়ে তোলা ব্যাক ব্যাংকের একটি ভবনে আরো ৩০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা আটকা পড়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম বলেন, ভেতরে অনেক লোক আটকে আছে। ফোনে তারা জানিয়েছেন, তাদের যেন উদ্ধার করা হয়। তবে বহুতল ভবনটির ২য় ও ৩য় তলায় শপিং কমপ্লেক্স থাকলেও এখনো চালু না হওয়ায় ওই দুই ফ্লোরে বেশি মানুষ থাকার সম্ভাবনা কম। স্থানীয়রা বলছেন, মঙ্গলবারই ভবনটিতে ফাটল দেখা গেলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি কেউই। আজ বুধবার সকালে যথারীতি পোশাকশ্রমিকরা কারখানায় কাজ করতে আসেন। এরপরই তারা এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
    সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয় তলা রানা প্লাজা ভবনটি। এতে ভূগর্ভস্থ গাড়ি রাখার জায়গা ছিল। দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। এ ছাড়া প্রথম তলায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল।
    প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বহুতল এ ভবনটির কয়েকটি তলা দেবে নিচের দিকে চলে গেছে। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়েছে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পর আশপাশের মানুষ নিজ উদ্যোগে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে এগিয়ে যায়।
    ওই ভবনের তৃতীয় তলার একটি পোশাক কারখানায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবীর হোসেন সরদার সেটি পরিদর্শনে যান। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ওই ভবনে আটকা পড়েছেন। এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে স্থানীয় লোকজন ও আটকা পড়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ফাটল দেখা যাওয়ার পরও ভবনটিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলায় আজ এত মানুষের জীবনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
    রানা টাওয়ার থেকে শুরু করে এনাম মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। মানুষ সামলানোর জন্য পুলিশ, সোনাবাহিনী ও ভলান্টিয়াররা কাজ করে যাচ্ছেন। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আনা হচ্ছে। প্রতি মিনিটেই তিন থেকে চারটি এম্বুলেন্সে করে আহতদের আনা হচ্ছে এনাম মেডিকেলে। নিখোঁজদের খোঁজে আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট। রোগী আনার কাজে পুলিশ, সেনাবাহিনী, এনাম মেডিকেল কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়ভাবে ভাড়ায়চালিত এম্বুলেন্স কাজ করছে। কলেজের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রায় তিন থেকে চারশ’ রোগীকে এরইমধ্যে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালটিতে রোগী সংকুলান না হলে বাকিদেরকে সামনেই অবস্থিত দ্বীপ ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।